আল্লাহর পথে চলা : শাহাদাত ও শহীদের মর্যাদা
আল্লাহর পথে চলা, কথা বলা ও সময় ব্যয় নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার। মু’মীন দাবীদার সবাই সেই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে না। অবশ্য এর মূল কারণ হলো, যথার্থ জ্ঞানের অভাব কিংবা পিছুটান ও অনাগ্রহ। অথচ যারা ভালোভাবে উপলব্ধি করে, তারা আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ কুরবানী করতে দ্বিধাবোধ করে না। এমনকি শাহাদাতের পেয়ালা পান করতে পেরেশান হয়ে যায়। সদা উদগ্রীব থাকে। সেই তামান্না নিয়ে এগিয়ে যায়। আল্লাহ তা’য়ালার কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করে। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, আল্লাহর পথে চলা, সময় ব্যয় করা, কথা বলা, সর্বোচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্তির জন্য প্রচেষ্টা জোরদার রাখা এবং আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা।
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তিনি কখনোই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না। [৪৭. সূরা মুহাম্মদ: ৪]। অর্থাৎ, তাদের পুণ্য ও পুরস্কার বিনষ্ট করবেন না।
মুমীনদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে তাদের করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ (অঙ্গীকার পূর্ণ করে) মারা গেছে এবং কেউ কেউ প্ৰতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি; [৩৩. সূরা আল-আহযাব: ২৩]। এই আয়াত ঐ সকল সাহাবায়ে-কিরামগণ (রা.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যাঁরা ঐ সময়ে নিজ নিজ জীবন কুরবানী দেয়ার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত পেশ করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে ঐ সকল সাহাবা (রা.)গণও ছিলেন, যাঁরা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি; কিন্তু তাঁরা এই অঙ্গীকার করে রেখেছিলেন যে, আগামীতে কোন যুদ্ধ উপস্থিত হলে তাতে পূর্ণভাবে অংশ গ্রহণ করবেন। যেমন আনাস বিন নাদ্বর (রা.) এবং আরো অনেকে যাঁরা উহুদ যুদ্ধে লড়তে লড়তে শহীদ হয়ে যান। উক্ত আনাসের দেহে তরবারি, ফলা ও তীরের আঘাত জনিত আশির অধিক যখম ছিল। শাহাদত বরণ করার পর তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনেছিলেন। [বুখারী, মুসলিম, আহমাদ: ৪/১৯৩]। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ আয়াতে সাহাবায়ে কিরামের প্রশংসা করা হয়েছে। হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমার চাচা আনাস, যার নাম আমার নাম। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। এটা তাকে পীড়া দিচ্ছিল। তিনি বলছিলেন যে, প্রথম যুদ্ধেই আমি রাসুলের (সা.) সাথে থাকতে পারি নি। যদি আল্লাহ আমাকে এর পরবর্তী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেন তাহলে আল্লাহ দেখবেন আমি কী করি। তারপর তিনি রাসুলের (সা.) সাথে ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন। যুদ্ধের ময়দানে সা’দ ইবনে মু’য়াজকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু আমর! কোথায়? তিনি জবাবে বললেন, আমি ওহুদের দিকে জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। তারপর আনাস ইবনে নাদ্বর (রা.) প্রচণ্ডরকম যুদ্ধ করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন। এমনকি তার গায়ে আশিটিরও বেশী আঘাত পরিলক্ষিত হয়েছিল। তাঁর জন্যই এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। [বুখারী: ৪৭৮৩]।
তারপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে আমলকারী কোন নর বা নারীর আমল বিফল করি না(১); তোমরা একে অপরের অংশ। কাজেই যারা হিজরত করেছে, নিজ ঘর থেকে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে আমি তাদের পাপ কাজগুলো অবশ্যই দূর করবো(২) এবং অবশ্যই তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার; আর উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই কাছে রয়েছে। [৩. সূরা আলে ইমরান: ১৯৫]। (১) উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.)-কে বললেন: আল্লাহ তা’য়ালা মহিলাদের হিজরত সম্পর্কে কোন কিছু বলেন না কেন? তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩০০]। (২) অর্থাৎ আল্লাহর হকের বেলায় যে সমস্ত ত্রুটি গাফলতী ও পাপ হয়ে থাকবে তা হিজরত ও শাহাদাতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে। তার কারণ, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীসে ঋণ বা ধারকে এ থেকে পৃথক করে দিয়েছেন। বান্দার হক থেকে ক্ষমা পাওয়ার নিয়ম হল স্বয়ং পাওনাদার কিংবা তার উত্তরাধিকারীকে প্রাপ্য পরিশোধ করে দেবে অথবা তাদের কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেবে। অবশ্য যদি কারো প্রতি আল্লাহ্ তা’য়ালা বিশেষ অনুগ্রহ করে পাওনাদারকে রাযী করিয়ে দেন, তবে তা স্বতন্ত্র কথা।
যারা হিজরত করেছে আল্লাহর পথে এবং পরে (শত্রুর হাতে) নিহত হয়েছে অথবা মৃত্যুবরণ করেছে (১) তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। (২) আর নিশ্চয় আল্লাহ; তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রুযীদাতা।(৩) [২২. সূরা হজ্জ: ৫৮]। [১] অর্থাৎ, সেই হিজরতের অবস্থায় যদি মারা গেছে অথবা শহীদ হয়ে গেছে। (২) অর্থাৎ, জান্নাতের নিয়ামত; যা না শেষ হবে, না ধ্বংস। (৩) কারণ তিনি বিনা হিসাবে, বিনা অধিকারে এবং বিনা চাওয়ায় রুযী দিয়ে থাকেন। তাছাড়া মানুষ এক অপরকে যা দিয়ে থাকে তাও আল্লাহরই দেয়া। সেই কারণে আসল ও উৎকৃষ্ট রুযীদাতা তিনিই। [তাফসীরে আহসানুল বায়ান]।
আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত(১); কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না। [২. সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৫৪]। (১) প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে-বরযখে বা কবরে বিশেষ ধরণের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের আযাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকীকত আমরা জানি না। যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহীদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহীদগণকে সে জীবনের অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়। হাদীসে এসেছে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদগণের রূহ সবুজ পাখীর প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। তারপর তারা আরশের নীচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কি চাইতে পারি? আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোন সৃষ্টিকে দেন নি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করেন। যখন তারা বুঝলো যে, তারা কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ফেরৎ পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি।
শহীদগণের সাওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবে- তখন তাদের মহান রব তাদের বলবেন, আমি এটা পূর্বে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোন সুযোগ নেই।” [মুসলিম: ১৮৮৭]। তবে সাধারণ নিয়মে শহীদদেরকে মৃতই ধরা হয় এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ওয়ারিসগণের মধ্যে বন্টিত হয়, তাদের বিধবাগণ অন্যের সাথে পুনর্বিবাহ করতে পারে। যেহেতু বরযখের অবস্থা মানুষের সাধারণ পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করা যায় না, সেহেতু কুরআনে শহীদের সে জীবন সম্পর্কে তোমরা বুঝতে পারো না বলা হয়েছে। এর মর্মার্থ হলো এই যে, সে জীবন সম্পর্কে অনুভব করার মত অনুভূতি তোমাদের দেয়া হয় নি। এ আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট হলো যে, শহীদেরা পার্থিব জীবনের মত জীবিত নন। তাদেরকে জীবিত বলা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ্ তা’য়ালা তাদেরকে বিশেষ এক জীবন বরযখে দিয়েছেন, যার হাকীকত বা বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। তাফসীরে আহসান বায়ানে বর্ণিত হয়েছে: যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, তাদেরকে মৃত বলো না, [১] বরং তারা জীবিত; কিন্তু তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। [১] শহীদদেরকে মৃত না বলা তাঁদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের জন্য। পক্ষান্তরে তাঁদের সে জীবন বারযাখের জীবন যা আমাদের অনুভূতি ও উপলব্ধির অনেক ঊর্ধ্বে। এই বারযাখী জীবন মর্যাদার স্তর অনুযায়ী আম্বিয়া, মুমীনগণ এমন কি কাফেররাও লাভ করবে। শহীদদের আত্মা এবং কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, মুমিনদের আত্মাও একটি পাখীর মধ্যে বা বুকে অবস্থান করে জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করবে। [ইবনে কাসীর, দ্রষ্টব্য- ৩. আলে-ইমরান: ১৬৯ আয়াত]।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি কিছু সংখ্যক মু’মীন আমার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারার ফলে তাদের মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমিও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বাহন সরবরাহ করতে পারছি না। যদি এরূপ সংকটাপন্ন না দেখা দিতো, তবে আমি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে প্রেরিত প্রতিটি সেনাবাহিনীর সাথে অবশ্য গমন করতাম, কোনোটি হতে পিছনে থাকতাম না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হলো- আমি আল্লাহর পথে শহীদ হই, অতঃপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হলে আমি আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যাই, এবং পুনরায় আমাকে জীবিত করা হোক এবং আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হই, আবার জীবিত করা হোক, আবার শহীদ হই, পুনরায় জীবিত করা হোক, পুনরায় শহীদ হই। [বুখারী: ২৭৯৭, মুসলিম: ১৮৮৬; নাসায়ী: ৩০৯৮]। হযরত সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর পথে এক দিনের সীমান্ত পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে (তার থেকে) সর্বাপেক্ষা উত্তম। [বুখারী: ২৮৯২, মুসলিম: ১৮৮১; তিরমিযী: ১৬৬৪]। হযরত আবু ‘আবস্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ করবে না। [বুখারী: ২৮১১]
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কাফির ও তার (মুসলিম মুজাহিদের) হত্যাকারী কক্ষনো জাহান্নামে একত্রিত হবে না। [মুসলিম: ১৮৯১, আবু দাঊদ: ২৪৯৫; মুসনাদ আহমাদ: ৯১৬৩]। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে আহত হয়, তবে আল্লাহই প্রকৃতপক্ষে জানেন যে, কে তার পথে হতাহত হয়েছে। কিয়ামতের দিনে সে এরূপ অবস্থায় আগমন করবে যে, তার ক্ষতস্থান হতে রক্ত প্রবাহিত হয়ে বের হতে থাকবে এবং তার বর্ণ রক্তের মতো হবে আর তার সুগন্ধি হবে মিশকের সুঘ্রাণের ন্যায়। [বুখারী: ২৮০৩, মুসলিম: ১৮৭৬; তিরমিযী: ১৬৫৬]।
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের পরে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না যদিও সে পার্থিব যাবতীয় সম্পদ প্রাপ্তির সুযোগ পায়।
অবশ্য শহীদ ব্যক্তি দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে এ উদ্দেশ্যে যে, দুনিয়ায় এসে সে পুনরায় দশবার শাহাদাত লাভের প্রত্যাশা করে এ সদিচ্ছার কারণে, সে জান্নাতে শাহীদের যে মর্যাদা তা প্রত্যক্ষ করবে। [বুখারী: ২৮১৭, মুসলিম: ১৮৭৭, মুসনাদ আহমাদ: ১২৭৭১; তিরমিযী: ১৬৬২]।
মু’মীনরা কখনো কাপুরুষের মতো জীবন কামনা করতে পারে না। তারা হক্ব পথে চলা ও কথা বলার এবং শাহাদাতের তীব্র বাসনা নিয়ে অগ্রসরমান থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ তা’য়ালা! আমাদেরকেও সেই কাতারে শামিল রাখুন। আমীন।
[লেখক: সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীন।]