ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ ও ৩ জনের মৃত্যু: সাদপন্থি ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জাতীয়
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানায় এই মামলা করা হয়। মামলা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি হলেন সাদপন্থিদের মুখপাত্র মুয়াজ বিন নূর।

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগে মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিবাদমান গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় ৩৫ ঘণ্টা পর থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাদ অনুসারীদের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েক শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার বাদী শুরায়ে নেজামের (জুবায়র পন্থি) অনুসারী তাবলিগের সাথি এস এম আলম হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর থানার গাইটাল গ্রামের এস এম মোক্তার হোসেনের ছেলে ও আলমি শুরার কিশোরগঞ্জ জেলার সাথি।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানায় এই মামলা করা হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা দায়েরের পর শুক্রবার ভোররাতে সাদপন্থিদের মুখপাত্র মুয়াজ বিন নূরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুয়াজ বিন নূর (৪০) মামলার ৫ নম্বর আসামি। নূর রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের নূর মোহাম্মদের ছেলে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান নূরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাকে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ভোররাতে পুলিশ রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি জানান, টঙ্গী  ইজতেমা মাঠে তিন খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলা হয়। এই মামলার ৫ নম্বর আসামি মুয়াজ বিন নূরকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় জিএমপির সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিরা মাওলানা সাদ কান্ধলাভীর অনুসারীদের উসকানিমূলক বক্তব্য দিকে থাকে ও তারা সময়ের আগেই মাঠে জড়ো হয়ে গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত শুরায়ী নেজামের সাথিদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতরা সকলেই আলমি শুরা বা শুরায়ি নেজামের ( জুবায়ের পন্থি) সাথি বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দুইপক্ষের উপস্থিতিতে সরকারিভাবে আগামী ২০২৫ সালেও  দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।  প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুরায়ে নেজামী এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা আয়োজনের কথা ছিল।

পরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে গত ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে সাদপন্থিরাও তাদের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ২০ ডিসেম্বর থেকে ইজতেমা ময়দানে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা করতে চাইলে জুবায়েরপন্থিরা তাতে আপত্তি জানায়। এতেই দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়।

এ অবস্থায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন, সমাবেশ, মহাসড়ক অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। জুবায়েরপন্থিদের সাংবাদিক সম্মেলনের পর সাদপন্থিরাও সম্মেলন করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সাদ অনুসারীদের দাবি ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পূরণ না হলে তারা ১৮ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরে ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতেই ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *