
সকালের ভূমিকম্পে ব্যাপক ভয়ে আছিলাম। এর মাঝে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড়াইয়া গিয়া দেখি পাশের বাড়ির উঁচু দেয়াল ভাইঙ্গা গেছে। দেয়ালের নিচ থেকে ছোট্ট দুইটা হাত বাইর হইয়া আছে। ইট সরাইতে সরাইতে ছোট্ট মাইয়ারে বাইর করলাম। কিন্তু বাঁচাইতে পারলাম না। এ সময় দেখি আমাগোর ছোট্ট ফাতেমার সঙ্গে তার মা কুলসুমও চাপা পড়ছে। পরে তারেও বাইর করলাম।’ শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের ঘটনার এমন বিষাদ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন রূপগঞ্জের ক্যানেলপাড়ার বাসিন্দা ইমতিয়াজ।
প্রতিবেশী ইমতিয়াজ বলেন, ‘মা কুলসুমের সঙ্গে নানাবাড়ি যাচ্ছিল দশ মাস বয়সী ফাতেমা। এ সময় এই ঘটনা ঘটে। এক মুহূর্তের ভূমিকম্প থামিয়ে দিলো তাদের সেই যাত্রা।’
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘ছোট্ট মাইয়াডা শেষ বিদায়েও বাবা মার সঙ্গ পাইলো না। তার মাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়াচ্ছেন বাবা আব্দুল হক। তিনটা হাসপাতাল থেকে ফিরাইয়ে দিছে। এদিকে আমরা ফাতেমার দাফন কাজ সম্পন্ন করেছি।’
ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘কুলসুমকে নিয়ে আমি ও আব্দুল হক এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুঁটছি। ইউএস বাংলা, ঢামেক, ন্যাশনাল- কোথাও কোনো সিট নেই। মাথায় আঘাত লইয়া মানুষ অচেতন, তাও ভর্তি নেবে না কয়। কেমন করে বাড়ি নেব?’
স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন বলেন, ‘আব্দুল হকের দুই মেয়েকেই মানুষ করার বড় স্বপ্ন ছিল। মানুষটা প্রায়ই বলত—আমি কষ্ট করে আমার দুই মেয়েকে মানুষ করব, ডাক্তার বানাব। গরিব মানুষের ফ্রি চিকিৎসা করবে আমার মেয়েরা। কিন্তু ছোট্ট ফাতেমা ডাক্তার তো দূরের কথা—ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময়ও পেল না।’
‘প্রাণের টুকরারে দাফন করার সময় একবার দেখতেও পারলাম না। কোলেও নিতে পারলাম না। আল্লাহ, এমন দিন যেন কোনো বাবার ভাগ্যে না আসে’, বলেন আব্দুল হক।
এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেয়ালটি নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়নি। ১০ ফুটের বেশি উচু সেই দেয়ালে ছিল না কোনো রড, না পিলার। এমন দেয়াল তো ভারসাম্য রেখেই দাঁড়াতে পারে না।
তিনি জানান, ইউনিয়নে অনেক ভবন ও প্রাচীর নিয়ম না মেনে নির্মিত হয়েছে; সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফাতেমার দাফনে পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেয়ার করুন


