দেশকে জানতে এবং জানাতে প্রতিনিয়ত ইত্যাদি যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কখনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে, কখনো ইতিহাস-ঐতিহ্য, কখনোবা শেকড়ের সন্ধানে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে আমাদের চির গৌরবের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছাত্র জীবনের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালের দরিরামপুরে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে কবির ছাত্রজীবনের স্মৃতি বিজড়িত দরিরামপুর স্কুলে তারই শ্রেণিকক্ষের সামনে। আমাদের জাতীয় কবির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে এবং তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নি-বীনা’র শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালের এই স্থানকে বেছে নেয়া হয়। ধারণ করা হয় ১৭ জুলাই। দর্শকদের বাঁধভাঙা জোয়ারে পুরো মাঠই ছিলো দর্শকপূর্ণ। শুধু তাই নয়, বেশ ক’টি ভবনের ছাদ, আশেপাশের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদ, গাছপালা সবকিছুতেই ছিলো দর্শক পরিপূর্ণ। স্থানীয়রা জানান, ইতিপূর্বে ত্রিশালে কখনো কোন অনুষ্ঠানে এত দর্শক সমাগম হয়নি। প্রচণ্ড তাপদাহ থাকা সত্ত্বেও দর্শকরা ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে সেদিন বর্ণিল আলো এবং জাতীয় কবির বিভিন্ন অমর কবিতা ও তাঁর প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো দৃষ্টি নন্দন মঞ্চে ইত্যাদির ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মত ইত্যাদির বিভিন্ন নান্দনিক পর্ব দেখার পাশাপাশি অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন একটি ভালো অনুষ্ঠান করতে হলে কতটা শ্রম দিতে হয়। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিলো লক্ষাধিক দর্শকের উচ্ছ্বাসপূর্ণ চিৎকার আর তালি বৃষ্টি।
শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতেও রয়েছে কিছু মানবিক, সচেতনতা, তথ্যভিত্তিক ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন।
এবারের অনুষ্ঠানে একটি জনপ্রিয় নজরুলসংগীত গেয়েছেন এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও প্রিয়াংকা গোপ। আর তাদের সহযোগিতা করছেন আরও একদল নজরুলসংগীত শিল্পী। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি। রয়েছে জাতীয় কবির তিনটি গান ও দু’টি কবিতার সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি সংগীতের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচ। সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি, নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ত্রিশাল এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্ব সাজানো হয়েছে কিছু নজরুলসংগীত ও লোকসংগীত নিয়ে। এই পর্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিরল বাদ্যযন্ত্র সংগ্রাহক ময়মনসিংহের সন্তান জনাব রেজাউল করিম আসলামকে। দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের বিশাল আয়োজনে সাজানো হয়েছিল দর্শকপর্ব। এই পর্বে দর্শকরা কিছু দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে নূতনভাবে পরিচিত হবেন।
নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও যথারীতি রয়েছে মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি, বিদেশি প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র পর্ব। এছাড়াও এবারের ইত্যাদিতে বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি ও সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্রুপাত্মক নাট্যাংশ।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আগামী ২৯ জুলাই, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।
শেয়ার করুন