ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন

ইসলাম ও জীবন

বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অন্যতম একটি নিয়ামত হচ্ছে, ইবাদতেই স্বাদ অনুভব করা। আমাদের অনেকেরই অনেক সময় এমন হয় যে নামাজ, রোজা ইত্যাদি ভালো কাজ সবই করা হচ্ছে। কিন্তু ইবাদতে কোনো স্বাদ অনুভব হয় না। বুকের জমিনটা যেন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

যাতে কোনো কিছুই উর্বর হচ্ছে না। প্রিয় নবী (সা.) ইবাদতের মাঝেই স্বাদ অনুভব করতেন। এ জন্য তিনি বলেছেন, ‘নামাজে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৩৯)
যেভাবে ইবাদতে স্বাদ অনুভব হবে

এক. যেসব কারণে ইবাদতে স্বাদ অনুভব হয় এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইবাদতের জন্য সাধনা করা। এর জন্য এমনভাবে পরিশ্রম করা যে এক সময় মন ইবাদতেই শান্তি খুঁজে পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, সবর অবলম্বন করো, মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন করো এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। ’ (সুরা : আল-ইমরান, আয়াত : ২০০)

 

দুই. সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকা। পাপের একটি নগদ শাস্তি হচ্ছে ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়া। পাপের কারণে বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে অন্তর কঠোর হয়ে যায়। সে জন্য সে আর ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। বিশেষ করে দৃষ্টিকে সংযত রাখা। অসুস্থ শরীর যেভাবে খাবারের স্বাদ অনুভব করে না তেমনি পাপাসক্ত ব্যক্তি ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। কারণ তার শরীর অসুস্থ হয়ে আছে। ইরশাদ হয়েছে, কোনো মুসলিম যখন প্রথমবার কোনো নারীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি পড়ার পর, দৃষ্টি অবনত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ইবাদতে বিশেষ স্বাদ আস্বাদন করান। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৭৮৪)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘তুমি যদি আমলের স্বাদ অনুভব না কোরো, তাহলে তুমি নিজের আমলকেই দোষারোপ কোরো। ’ (মাদারিজুস সালিকিন : ২/৯০)

তিন. অহেতুক জিনিসকে বর্জন করে চলা। অহেতুক কথাবার্তা অতিরিক্ত পানাহার—এসব বিষয় ইবাদতের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদমের সন্তান!…খাও ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করো না। আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

মারুফ কারখি (রহ.) বলেন, ‘অহেতুক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। ’ (জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা ৩১৭)

চার. মনে মনে এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহ তাআলার ইবাদত, নামাজ, রোজা, হজ, সদকা ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার মাধ্যম। এবং এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ভালোবাসবেন। আর বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে। আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বিন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসুল হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.)-কে সন্তুষ্টচিত্তে স্বীকার করেছে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *