ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

খেলাধুলা

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং উপহার দিল বাংলাদেশ। অন্য ব্যাটারদের কেউই সেভাবে বড় ইনিংস না গড়তে পারলেও একপ্রান্ত আগলে ঝড় তুললেন পারভেজ হোসেন ইমন। তরুণ এই ওপেনার রেকর্ড গড়া দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে বোর্ডে বড় রানই জমল। তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত রান তাড়ায় করল সাহসী ব্যাটিং, যাতে জাগল তাদের জয়ের সম্ভাবনা। এরপর শেষের দিকে ঝড় তুললেন আসিফ খান। তবে সেটা সামলে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ।

শারজাহতে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ২৭ রানে। ৭ উইকেটে ১৯১ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৬৪ রানে আটকে দিয়েছে তারা। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী সোমবার একই ভেন্যুতে।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম ওভারে এক চার ও এক ছক্কায় ভালো শুরু এনে দেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে মাত্র ১০ রানেই থামতে হয় তাকে পরের ওভারে।

ধ্রুভ পারেশকারকে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে অন্যপ্রান্তে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের আভাস দেন ইমন। তবে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ক লিটন। এক ছক্কায় ৮ বলে ১১ রান করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ম্যাচে চমৎকার বোলিং করা মুহাম্মাদ জায়াদুল্লাহর বলে।

প্রথম ছয় ওভারে ৫৫ রান করা বাংলাদেশের ইনিংসে গতি দেন ইমন, অষ্টম ওভারে। সাঞ্চিত শর্মার ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে তিনটি ছয় ও এক বাউন্ডারিতে আদায় করেন ২২ রান। এরপর চার মেরে মাত্র ২৮ বলে পূর্ণ করেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটি।

তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটেও ছিল আক্রমণের সুর। ভালো কিছু শটে দ্রুতই চলে যান বিশের ঘরে। তবে পারেননি সেটা লম্বা করতে। এক চার ও এক ছক্কায় ১৫ বলে করতে পারেন ২০ রান।

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মাহেদি, জাকের আলি অনিক বা শামিম হোসেনরা পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মিটিয়ে ব্যাটিং করতে। ফলে নিজের সেঞ্চুরির পাশাপাশি ইমনের কাঁধেই চাপে দলকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার।

প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছক্কা হাঁকিয়ে সেই কাজটা তিনি সামলান দক্ষতার সাথেই। ১৭ত্ম ওভারে মাতিউল্লাহ খানকে মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা। ১৯তম ওভারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির দেখা পান তরুণ এই ব্যাটার। ৫৩ বলে তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখেন ইমন।

এর মধ্য দিয়ে মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করেছেন ইমন। এরপরই আউট হলেও তার আগে হাঁকান ৯টি ছক্কা, যা এক ইনিংসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।

চার ওভারে মাত্র ২১ রানে ৪ উইকেট নেন জায়াদুল্লাহ।

১৯১ রান ডিফেন্ড করতে নামা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ওভারে চমকে দেন আরব আমিরাত ওপেনাররা। শেখ মাহেদি হাসানকে তিন চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে আদায় করেন ১৯ রান। তানজিম হাসান সাকিবের করা পরের ওভারটিও হয় ব্যয়বহুল, আসে ১৪ রান।

শেষ পর্যন্ত আক্রমণে এসে জুটিতে ভাঙন ধরান হাসান মাহমুদ। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মুহাম্মাদ জোহাইব। অন্যপ্রান্তে মুস্তাফিজুর রহমানও তার করা প্রথম ওভারে দেখা পান উইকেটের।

প্রথম ওভারটা ভীষণ হিসেবী করা হাসান ফিরতি স্পেলে এসে হজম করেন বেদম মার। তার ওপর চড়াও হয়ে রাহুল চোপড়া তিন বাউন্ডারির সাথে মারেন একটি ছক্কায়, ওভারে আসে ১৯ রান।

বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামও পারছিলেন না সুবিধা করতে। ওই সময়ে তাই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ৩২ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন ওপেনার মুহাম্মদ ওয়াসিম। ১০ ওভার শেষে আরব আমিরাতের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৯৮।

চাপ সামলে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রুটা এনে দেন তানজিম। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ৩৯ বলে ৫৪ রান করা ওয়াসিম। তবে ক্রিজে গিয়েই পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার ভাজ বাড়ান আসিফ খান। মাহেদির ওভারে হ্যাটট্রিক ছক্কার মারে ২৭ রান।

অন্যপ্রান্তে বিপজ্জনক রাহুলকে (৩৫) ফিরিয়ে ফের বাংলাদেশকে ম্যাচে ধরে রাখেন তানজিম। অন্যপ্রান্তে এরপর আসা-যাওয়ার মিছিল অব্যাহত থাকলেও একাই লড়ে যান আসিফ। ১৯তম ওভারে তার বিদায়েই মূলত শেষ হয় আরব আমিরাতের জয়ের আশা।

তবে তার আগে বাংলাদেশকে ভয় পাইয়েই দিয়েছিলেন ৪টি ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে মাত্র ২১ বলে ৪২ রানের ইনিংসে, যার ইতি ঘটে হাসানের বলে। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েই তিনিই বাংলাদেশের সেরা বোলার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *