ইসরাইলি আগ্রাসন সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ কেন ট্রেন্ডিংয়ে ‘অল আইজ অন রাফাহ’?

বিশ্ব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে চোখ রাখলেই এই মুহূর্তে দেখা মিলবে বিশেষ একটি বাক্য লেখা ছবির। অল্প সময়ের মধ্যেই ‘অল আইজ অন রাফাহ’ লেখা ছবিটি কার্যত উঠে এসেছে ট্রেন্ডিংয়ে। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায়, সবার নজর রাফাহ’র দিকে। কিন্তু হঠাৎ কেন ট্রেন্ডিংয়ে এই বাক্য? এর উৎসই বা কী?

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের চলমান সহিংসতার দিকে বিশ্বের নজর ফেরানোর আহ্বান জানানো ছবিটি ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার হয়েছে প্রায় চার কোটি বার। আর সময় যত গড়াচ্ছে, ততই যেন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে পোস্টটি।

 

মূলত গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ভূখণ্ডের রাফায় আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যে পোস্ট করছে, সেখানেই উল্লেখ করা হচ্ছে ‘অল আইজ অন রাফাহ’। 
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গেল রোববার রাতে দক্ষিণ গাজার রাফায় শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের হামলায় নারী-শিশুসহ ৪৫ জন নিহত হন। এমন হামলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, রাফায় হামলা ছিল একটি ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’।

শুরুতে ইসরাইলি সেনারা দাবি করেছিল, হামাসের ঘাঁটিতে সফল অভিযান চালানো হয়েছে। যাতে বেশ কয়েকজন হামাস কমান্ডার নিহত হয়েছেন। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে হামলার তথ্য সামনে আসতেই নিন্দায় সরব হয় বিশ্ব। আর তারপর থেকেই ট্রেন্ডিংয়ে ‘অল আইজ অন রাফা’।

ছবিটি প্রাথমিকভাবে ইনস্টাগ্রামের স্টোরিজ ফিচারের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়। যারা এটি শেয়ার করেছেন, তাদের মধ্যে ‘ব্রিজারটন’ তারকা নিকোলা কফলান, গায়ক-গীতিকার কেহলানি এবং ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা বরুণ ধাওয়ানসহ রয়েছেন প্রভাবশালী অনেক ক্রীড়াবিদ এবং সেলিব্রিটি। 
 
নিজস্ব প্ল্যাটফর্মগুলোতে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর বিস্তারকে সীমিত করার জন্য মেটা প্রচেষ্টা চালালেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং ফিলিস্তিনি সমর্থকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইনস্টাগ্রাম।

এনবিসি বলছে, ‘অল আইজ অন রাফাহ’ ছবিটি যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক তখন রাফাহ থেকে পোস্ট করা ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের অনেক ভিডিও সীমিত করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইলি হামলার গ্রাফিক্যাল ছবিকেও ‘ভায়োলেন্স’ কিংবা ‘সংবেদনশীল’ দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। 

 
ইনস্টাগ্রামের একজন মুখপাত্র বলেছেন,

প্ল্যাটফর্মের নীতি লঙ্ঘন করেছে এমন হিংসাত্মক এবং গ্রাফিক প্রকৃতির কিছু কন্টেন্ট সরিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। 

সামাজিক মাধ্যম-বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা’র মতে,

অনেক প্রভাবশালী এবং সেলিব্রিটি অল আইজ অন রাফাহ পোস্টটি শেয়ার করছেন। শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামে নয়, একাধিক প্ল্যাটফর্মে লাখ লাখ মানুষ এসব সেলিব্রিটিকে ফলো করেন। এর কারণে পোস্টটির রিচ বাড়ছেই। 

অল আইজ অন রাফাহ’ লেখা ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি করা ভাইরাল ‘অ্যাক্টিভিস্ট আইকনোগ্রাফির’ প্রথম ছবিগুলোর মধ্যে একটি বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 
 
‘মিসইনফরমেশন’ নিয়ে পড়াশোনা করা কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোন্স বলেছেন,
ছবিটি অবশ্যই এআই দিয়ে তৈরি বলে মনে হচ্ছে।

এছাড়া যে অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রাথমিকভাবে ইনস্টাগ্রামে ‘অল আইজ অন রাফাহ’ ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে যে-ই তৈরি করুক আর যেভাবেই তৈরি হোক; বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে উঠছে, ‘অল আইজ অন রাফাহ’ পোস্টটি তার অন্যতম বড় উদাহরণ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *