মামুন হোসাইন
১৫ আগস্ট। ইসলামী শিক্ষা দিবস। প্রতি বছর উৎসাহ, আকর্ষণ ও বিভিন্ন প্লাটফর্মে ইসলামী ছাত্রশিবির এই দিবস উদযাপন করছে। অধিকাংশ জনশক্তি, সামাজিক মাধ্যম, অল্প সংখ্যক গণমাধ্যমে এর প্রভাব রয়েছে। ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়ন বেশ বিস্তৃত, চর্চা, অনুধাবন ও জ্ঞানগভীর একটি প্লাটফর্ম। ছাত্ররা কেবল এই সুবিশাল অংঙ্গনের উপাদান হতে পারে কিন্তু সর্বক্ষেত্র বাস্তবায়নকারী নয়। ছাত্রদের এই কর্মসূচি গুলো বৃহত অঙ্গনের সাথে যেন সহায়ক হয় এই দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে।
ইসলামী শিক্ষার প্রভাব দেশের সর্বমহলে একেবারেই নগণ্য। আধুনিকতা ও ইসলাম বিদ্বেষী প্রভাবে যেমন সয়লাব হচ্ছে এই জনপদ তেমনি ইসলামী শিক্ষা রীতিমতো অবহেলিত হচ্ছে। আর এমন অবস্থানে দৃশ্যত ইসলামী শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার সাথে তাল মেলাতে পারছে না। কোন ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার ফাইনাল স্টেইজে পৌঁছাতে এখন অনেক শিক্ষার্থীদেরই অনিহা বিদ্যমান। বলাই যায়, মুসলিম নামধারীরা এখন ইসলামী শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অত্যাধুনিক ও অতিমাত্রায় অর্থ উপার্জনের বাহন হিসেবে উপস্থিত হয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্র।
ইসলামী শিক্ষার ফলে ইহকালীন কল্যাণের ধারাও রপ্ত করা সম্ভব। গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা, তথ্য-প্রযুক্তি, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যাবসা ও অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার বাস্তব উপকরণ রয়েছে। আগামী বিশ্বের সকল সমস্যা-সম্ভাবনার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে ইসলামী শিক্ষা। বর্তমান সমাজে এর দৃশ্যমান কোনো ফল না থাকায় মানুষ এখনও ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছে না। দুনিয়ার তাবৎ মুনাফেকী ও হারাম ব্যাবস্থা ভেঙ্গে মুচড়ে দিয়ে নতুন শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে ইসলামী শিক্ষা।
পৃথিবীর সকল শিক্ষা ব্যাবস্থার গলদ এখন স্পষ্ট এক বিষয়। কিন্তু ইসলামী শিক্ষার গলদ না থাকলেও এর পেছনের ষড়যন্ত্র গুলো পানির মতো পরিষ্কার। বিশ্বে বর্তমানে প্রথম সারির শিক্ষা ব্যাবস্থা ফিনল্যান্ডের। ফিনল্যান্ডের এই শিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণা, শিশু শিক্ষা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, পদ্ধতিগত ও প্রক্রিয়াগত বেশ ত্রুটি জনসমক্ষে প্রতিয়মান। এই লিস্টে সুইজারল্যান্ড- দ্বিতীয়, বেলজিয়াম- তৃতীয়, সিঙ্গাপুর- চতুর্থ এবং নেদারল্যান্ডস- পঞ্চম। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ প্রতিবছর ১২টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। দেখার বিষয় হলো, শিক্ষা ব্যাবসায় বিশ্ব কাঁপানো কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও খোদ ইংল্যান্ডও সেরা পাঁচে নাই।
আদর্শবাদী শিক্ষায় ইসলাম এগিয়ে রয়েছে। আজ এরিস্টটল বা প্লেটোর শিক্ষানীতিও খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ভাববাদী ও আদর্শবাদী শিক্ষা বিশ্বময় এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। শুধু কার্লমাক্স, লেনিন, বস্তুবাদী ছাড়াও দুনিয়ায় ব্রহ্ম, বৌদ্ধিক, ক্যাথলিক, সনাতন, ইব্রীয় ইত্যাদি শিক্ষা চলমান। এরা সবাই মিলে ইসলামী শিক্ষাকে একদেশদর্শী, সংকীর্ণচেতা, সেকেলে এবং অলৌকিক ও অতি-প্রাকৃতিক বিষয়াদি দ্বারা ভারাক্রান্ত বলে অভিযোগ করেছেন। ইসলামিস্টরা এব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করলেও ইসলামী শিক্ষার পক্ষেও তাঁরা মুখবন্ধ করে রেখেছেন। এটাই ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের মূল বাধা। খোদ মুসলিমরাই ইসলামী শিক্ষার বিরোধিতা করছেন। অপরপক্ষে অন্যান্য ভাববাদী ও আদর্শবাদী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাস্তবে বা অবাস্তবে মনে প্রাণে লালন, ধারণ ও লড়াই করে চলেছেন ঐ আদর্শের প্রতিটি ব্যক্তি।
লক্ষ্যহীন শিক্ষাযাত্রায় কুয়াশা ছাড়া কিছুই নেই। এপৃথিবীর সব মুসলিম যখন ইসলামের আলোকে নিজেকে গড়বে কেবল সেদিনই মিলবে মুক্তি। সচেতন হয়ে সব ইসলামী মহলকে একই প্লাটফর্মে গবেষণা করে বিশ্বজুড়ে বিপ্লবের বীজ বুনতে হবে। ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের এমন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ওয়াকিবহাল রয়েছেন ক’জন? এপ্রশ্ন থেকেই যায়। যে যার মতো অগোছালো কাজ করছে বলেই ইসলামী শিক্ষা ব্যাবস্থা এই অবস্থায় রয়েছে। গঠনমূলক ও ঐক্যের সমন্বয়ে কাজটি এগিয়ে নিতে পারলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বিশ্বময়।
সমস্যা হলো- ইসলামী শিক্ষার আমল নিয়ে। ইসলামী শিক্ষার বাস্তব প্রতিচ্ছবির উপযোগী জনশক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অভাব। ইসলামের ধারক-বাহকদের এব্যাপারে খোদ অনিহা বিদ্যমান। ইসলামের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্নইবা আজ ক’জন দেখে। আর ষড়যন্ত্রকারীদের হীন উদ্দেশ্য খুবই সহজে মুসলমানদের উপর ভর করে বলেই ইসলামী শিক্ষার প্রভাব ধীর গতিতে চলছে। পৃথিবীতে মসজিদ, মাদরাসা আর মক্তব নিয়ে যা নিউজ হয় অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে হয় না। একচেটিয়া ইসলামোফোবিয়া ইসলাম শিক্ষা ব্যাবস্থা বাস্তবায়নে অন্যতম প্রধান বাঁধা।
আদর্শবাদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর নৈতিক মানুষেরা হোক ইসলামী শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। মালেকের উত্তরসূরীরা ইসলাম বিজয়ের স্বপ্ন দেখো, নিজের মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আমি আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে চাই না। এজন্য শিক্ষা আন্দোলনে পৃথিবীর একমাত্র শহীদ আব্দুল মালেক ভাই বলেছিলেন, আমি ছোট থেকেই স্বার্থকতা পেতে চাই।
শেয়ার করুন