ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলার আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া মামলার ১৩তম আসামি। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন রোববার এ আদেশ দেন।
ঈদী আমিন আদালতকে বলেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, নির্দোষ। এর আগে তার সঙ্গে থাকা আরেক আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে (২৪) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বর্তমানে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) হেফাজতে সাত দিনের রিমান্ডে আছেন।
এদিকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আরও এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে শনিবার নূরে এ আজাদ নামের ওই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয় পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হলো।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ওই পুলিশ সদস্যকে বলা হয়েছিল আসামিদের আদালত থেকে নামিয়ে ভবনের নিচে অপেক্ষা করতে। সেটা না করে তিনি একাই জঙ্গিদের নিয়ে বের হলে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে আজাদ জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের হামলায় আহত হয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শনিবার কাজে যোগ দিলে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে বরখাস্ত হয়েছিলেন-সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ (পরিদর্শক) নাহিদুর রহমান ভূঁইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, পুলিশ সদস্য শরিফ হাসান ও আবদুস সাত্তার।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ের সময় ঈদী ও রাফি ছিলেন একসঙ্গে। তারা অন্য একটি মামলায় তখন জামিনে ছিলেন। ওইদিন আদালতে শুনানি শেষে বের হয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ে অংশ নেন। ঈদীর গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনেরচর শশীভূষণে। তবে থাকতেন ঢাকার সূত্রাপুরে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোববার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন ঈদী। অন্য দিকে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, ছিনিয়ে নেওয়া দুজনসহ ১২ আসামিকে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হত্যা মামলারও আসামি তারা।
দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
তারা হলেন-শাহীন আলম ওরফে কামাল, শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন, বিএম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, আরাফাত রহমান, খাইরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, শেখ আবদুল্লাহ, আবদুর সবুর ও রশিদ উন্নবী ভূঁইয়া। এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
শেয়ার করুন