বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতি সৎ, যোগ্য ও আদর্শিক নেতৃত্বের অভাব গভীরভাবে অনুভব করছে। এ নেতৃত্বের শুন্যতা পূরণে ছাত্রশিবিরকে উত্তম চরিত্র ও মেধার সমন্বয়ে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
তিনি রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘সাথী সম্মেলন ২০২২’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের পরিচালনায় অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, দেলাওয়ার হোসেন, ইয়াসিন আরাফাত ও সালাহউদ্দিন আইউবী। এসময় সেক্রেটারিয়েট সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, ছাত্রশিবির আল্লাহর পক্ষ থেকে দেশ ও জাতির জন্য একটি নেয়ামত। এ সংগঠন তরুণদের আল্লাহর মাগফিরাত আর জান্নাতের দিকে ডাক দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রশিবির রক্ত আর ত্যাগের ইতিহাসকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। চলার পথে কাফেলার অনেক সাথী রক্তমাখা পোষাকে মহান প্রভুর দরবারে হাজির হয়েছে। শহীদদের ও তাদের স্বজনদের অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু শহীদেরা সকল স্বপ্ন আল্লাহর জন্য কুরবানী করে দিয়েছে। তারা আমাদের প্রেরণার মিনার। শহীদদের রেখে যাওয়া আমানতের হেফাজতকারী ব্যক্তিগতভাবে আমরা সবাই আর সমষ্টিগতভাবে সংগঠন। এ সংগঠন চলার বাঁকে বাঁকে বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। এখনো প্রতিবন্ধকতা আছে। কিন্তু আমাদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। দাওয়াত অব্যাহত রাখতে হবে এবং সংগঠন বিস্তৃতির কাজে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।
তিনি বলেন, সময়ের আবর্তনে আমাদের মধ্যে নিত্য নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো মূল্যবান কাজে না লাগিয়ে অযথা নষ্ট করে দেন। ফলে অনেকের আমলে ঘাটতি হচ্ছে। মহান আল্লাহ তায়ালা যৌবনকালের হিসেব কঠিনভাবে আদায় করবেন। এ সময়টা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় সমাজ পরিবর্তনের মূল নিয়ামক ছিলেন যুবকরা। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান কায়েম ও আখিরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতেন। এ জন্য তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করেছেন। ময়দানের যোদ্ধা ছিলেন আর শেষ রাতে মহান রবের ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। আমরা তাদেরই উত্তরসূরী। একটি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হলে মেধাবী নেতৃত্বের প্রয়োজন। এজন্য উত্তম চরিত্র ও মেধার সমন্বয় করতে হবে। মসজিদগুলোকে ক্যাম্পাসে পরিণত করতে হবে। বেনামাজিকে নামাজি বানাতে হবে। পুরো সমাজে ইসলামের আবাদ করতে হবে। এভাবেই আমরা পুরো বাংলাদেশে কুরআনের গোলাপ ফুটাবো ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির একটি বিপ্লবী চেতনার নাম। যে চেতনার ভিত্তি মহান আল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গাইডবুক আল কুরআন। ছাত্রশিবির সেই বিপ্লবের কথা বলে যে বিপ্লব ঘুণে ধরা সমাজকে ভেঙ্গে দিবে, মিথ্যার দাফন করবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে ও সকল সংকীর্ণতা তাড়িয়ে দিয়ে হেরার আলোকে উদ্ভাসিত করে তুলবে। সাথীদের মনে রাখতে হবে, তারা গতানুগতিক কোন ছাত্রসংগঠনের জনশক্তি নয় বরং তারা সমাজ বিপ্লব ও সত্য প্রতিষ্ঠার কর্মী। মানুষ ছাত্রশিবিরের একজন সাথীর কাছে যে চেতনা, যোগ্যতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে তা অর্জনে সাথীরা সচেষ্ট হলে অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত ইসলামী বিপ্লব সংগঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।জাহেলিয়াত, অন্যায়, মিথ্যা ও নিজের মধ্যে ইসলাম বিরোধী কিছু থাকলে আমরা তা মানি না। পরিবর্তনের শুরু হবে নিজ থেকে এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজ ও রাষ্ট্রে। সুতরাং ছাত্রশিবিরের সাথীদের নৈতিকতা, আদর্শ ও চরিত্রের দিক থেকে অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমাদের সমাজে অন্যায় অবিচার জুলুম অমানবিকতার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে মানুষই অন্য মানুষকে নির্বিচারে খুন, গুম ও নির্মম নির্যাতন করছে কিন্তু তাদের বিবেকে বাঁধছে না। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে জাহেলিয়াতের সংস্কৃতি মদকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে মদের প্রতিক্রিয়া নগ্নতা, বিশৃঙ্খলা, বেহায়াপনাকেও বৈধতা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতিকে অনৈতিকতার স্রোতে ভাসিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জাহেলি সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে একটি সংগ্রাম দরকার। ছাত্রশিবির সেই সংগ্রামেরই নাম যারা কুরআনকে ধারন করে। এ নিকষ অন্ধকার থেকে ছাত্রসমাজকে কুরআনের আলোর পথ দেখাতে ছাত্রশিবিরের প্রচেষ্টাকে আরো গতিশীল করতে হবে। এ জন্য ছাত্রশিবিরের সাথীদের চারিত্রিক, নৈতিক ও ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপী খিলাফত কায়েমের দায়িত্ব আমরা পালন করছি। যে দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়েছেন। শুরুতে কয়েকটি পা দিয়ে যে কাফেলা যাত্রা শুরু করেছিল সে কাফেলা আজ মেধাবীদের এক বিশাল মিছিলে পরিণত হয়েছে। শহীদ সাব্বির, শহীদ হামিদের মিছিল আজ ২৩৪ জন শহীদের মিছিলে পরিণত হয়েছে। ৬ জন ভাইয়ের গুম ও অসংখ্য ভাইয়ের আহত, পঙ্গুত্ব আমাদের জন্য প্রেরণা। এ প্রেরণা নিয়েই আমরা কাজ করে চলেছি। ইসলামী আন্দোলন মানেই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্বক প্রচেষ্টার নাম। সন্তুষ্টচিত্তে এ প্রচেষ্টায় আমাদের অটল থাকতে হবে। ছাত্রশিবির রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের পদাঙ্ক অনুস্বরণ করে এগিয়ে চলেছে। আমরা সচেতনতার সাথে আমাদের পথ, লক্ষ্য ও সফলতার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল। কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের শুন্যতা পূরণে ইসলামের যথার্য জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা অর্জন, দূরদর্শী হওয়া ও নিজেকে সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের ছাত্রসমাজ নানাভাবে অমানিশার অন্ধকারের দিকে ছুটছে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ছাত্রসমাজকে রক্ষার একমাত্র পথ তাদের কাছে ইসলামের আদর্শের আলোকবর্তিকা নিয়ে হাজির হওয়া। ইসলামী আদর্শই হচ্ছে ছাত্রশিবিরের আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ইসলামকে মেনে চলতে পারছি কি না তা সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক ছাত্রের কাছে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। কোনো অহেতুক বিচরণ নয় বরং সোশ্যাল মিডিয়াকে ইসলামের জন্য ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সকল কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি হতে হবে আল কুরআন আর মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
শেয়ার করুন