তানজিল হোসেন, গোয়াইনঘাট:
সিলেটের গোয়াইনঘাটে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ফলপ্রার্থী ফল প্রকাশের পর আশানুরূপ ফল না পেয়ে তার পাওয়া ফলাফল বিশ্লেষণ করে নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। সিলেট সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ সেলিম উদ্দিন চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী সেলিম উদ্দিন গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর চতুর্থ খন্ডের (লামা ফতেপুর) মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার রেজাল্ট বিশ্লেষণের উপর দেওয়া আবেগঘন স্ট্যাটাস সিলেট লাইন২৪ ডটকম পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
বাংলা এ+ (মার্কস ১৬২), ইংরেজি এ-(মার্কস ১৩৫)২০০ মার্কের পরীক্ষায় সবকিছুই তো ঠিকঠাক লিখেছিলাম হুবহু। কোনো কাটাকাটি, ওভার রাইটিং বা ভুলভাল উত্তরও লিখি নাই। পরীক্ষা দিয়ে বিশ্বস্ত এবং সঠিক উৎস থেকে মিলিয়েও দেখেছিলাম সবকিছুই ঠিকঠাক আছে উত্তর। আর এখন বোর্ড রেজাল্ট বলছে মাত্র ১৩৫ মার্ক! বুঝলাম পাসের হার কমানোর উদ্দেশ্য, তাই বলে সঠিক উত্তরেও এতো মার্ক কাটা লাগবে ?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: A+ (মার্কস ৮৪), পদার্থবিজ্ঞান: এ- (মার্কস ১৩২), রসায়ন: বি (মার্কস ১০৪)। দুই পত্রের মধ্যে এমসিকিউ ৫০ এর মধ্যে ৩১ হয়েছিলো মিলানোর পরে। আর ব্যবহারিকে ২৫ এর মধ্যে ২০ করেও ধরলে দুই পত্রে হয় ৪০। সৃজনশীল বাদে এমসিকিউ আর ব্যবহারিকেই মার্কস দাঁড়ায় ৭১। তাহলে, সৃজনশীল দুই পত্রে ফুল মার্কস লিখে (৫০+৫০ =১০০ এর মধ্যে) কি মাত্র ৩৪ পেলাম! এটি কোন ধরনের পেপার কাটার ধরণ? জীববিজ্ঞান বি (মার্কস ১১২)। পরীক্ষা অনুযায়ী জীববিজ্ঞান দুই পত্রের এমসিকিউ, সিকিউ আর ব্যবহারিক মিলিয়ে ২০০ এর মধ্যে ১৫০+ হওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা সর্বোচ্চ ভালো করে দিয়েও মার্কস অর্ধেকই কাটা পড়ে। কিন্তু কেন?
উচ্চতর গণিত(অপশনাল) :{ F }, বিজ্ঞান বিভাগের সবগুলো বিষয়ে যতটা শ্রম দিয়েছিলাম, জিপিএ- ৫.০০ টিকানোর জন্য ; অপশনাল সাবজেক্ট উচ্চতরে শুধু ততটা সময় দিয়েছিলাম। পরীক্ষা দিয়ে এসে উদ্ভাস, টেন মিনিট স্কুল, রেটিনা, বিভিন্ন ভালো মানের বইসহ নানান উৎস থেকে উচ্চতরের এমসিকিউ মিলিয়ে দেখি যে, ৩৪টি এর মতো হয়েছে ৫০ টি থেকে। আর সৃজনশীলে উত্তর করেছিলাম ১০০(৫০+৫০) তে ১০০। ব্যবহারিকে ২৫ এ প্রত্যেককেই ২০+ দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ দুই পত্রে ৪০+। তাহলে কোন হিসেবে আমার রেজাল্ট নট শউন(F) দেখায়।
তিনি লিখেন, কলেজ লাইফটা খুব খুব কষ্ট করে পড়েছি আর শেষে এসে এরকম ধাক্কা। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে ভেঙে গেলো। অবশ্যই কলেজ লাইফের পুরোটা সময়ই নিয়মিত উচ্চতরের পিছনে দিয়েছিলাম।
দিনরাত ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, নাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, আরাম-আয়েশ সব বিসর্জন দিয়ে তিল তিল পরিশ্রমের মানে ওরা কি বুঝবে? ওরা তো বড় বড় শিক্ষাবিদ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (ওরা গাফিলতি করলে কারো কিচ্ছু করার নেই)। স্রোতের বিপরীতে একজনের পুরো ক্যারিয়ারের প্রশ্ন এটাতো কেউই বুঝবে না!
যদিও মধ্যম পর্যায়ের রেজাল্ট (৩.৮৩) আর পাশ রেজাল্ট এসেছে, তবুও এই রেজাল্টের ফলে জীবনের মোড় নিজে থেকেই বদলে দিবো সম্পূর্ণ ভাবেই। সোনার বাংলাদেশের নোংরা শিক্ষাব্যবস্থা (হঠাৎ অটোপাশ সংক্রমণ আর হঠাৎ পাসের হার কমানোর প্রত্যয়) -এর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আর পরিশ্রম নিছক অহেতুক। সবার স্বপ্ন বেঁচে থাকুক, সবার মন মতো।
শিক্ষার্থী সেলিম জানান, উচ্চতর প্রথম পরীক্ষার সময় আমি পাশের দুজনকে দেখাইছিলাম বলে স্যার ওদের পেপার নিছে আর বলছে তিনজনেরই উচ্চতরে ফেল করে রাখা হবে। আর আজ বাস্তবে তা রূপ নিলো। রি-এক্সামে তো পেপার দেখা হয়না। তো আমার মূল মন্তব্য হলো, কোথায় গন্ডগোল হলো অপশনাল সাবজেক্ট উচ্চতর এর তা কতৃপক্ষ খতিয়ে দেখার। সেলিম বলেন, জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫.০০(A+) পেয়ে আজ খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েও জিপিএ-৫.০০ তথা আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার হতাশা নিজেকে চারপাশ থেকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।
শেয়ার করুন