এক ঘন্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে থৈ থৈ পানি, সমালোচনার মুখে মেয়র আরিফ

সিলেট

মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টিতে সিলেট নগরজুড়ে থৈ থৈ অবস্থা। যেন হঠাৎ নামা পাহাড়ী ঢল কিংবা বাঁধ ভাঙা বন্যায় তলিয়ে গেছে গোটা নগরী। এই অবস্থায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়রের অপরিকল্পিত উন্নয়নের সমালোচনায় মূখর।

শনিবার রাত ১১টার দিকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। গেল কয়েকদিনের দাবদাহের পর বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসলেও জলাবদ্ধতার বিড়ম্বনায়ও কম ভোগায়নি। এক ঘন্টার বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। বাসা-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনার নিচতলায় উঠে পড়ে পানি। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।

বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, লোহারপাড়া, বড়বাজার, লামাবাজার, মদিনামার্কেট, চারাদিঘিরপাড়, সওদাগরটুলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, শাপলাবাগ, তালতলা, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, জল্লারপাড়, ভাতালিয়া, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, মেন্দিবাগ, দরগামহল্লা, লালদিঘিরপার, কুয়ারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে।

এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি উঠে যায়। এসময় অনেককে খাটের উপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে রক্ষা করতে দেখা যায়। রাত ১২টার দিকে বৃষ্টি থামে। এর ঘন্টা কয়েক পর বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।

এদিকে, এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরবাসীর সমালোচনার মুখে পড়েন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জলাবদ্ধতার জন্য মেয়রের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজকে অনেকেই দায়ি করেন। শহরের ছড়া-খাল ও ড্রেন উদ্ধার এবং সংস্কার কাজে ব্যয় হওয়া ১২শ’ কোটি টাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন অনেকে।

জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনে মুহূর্তেই হাঁটু-পানি উঠে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার বই ভিজে নষ্ট হয়ে যায় বলে কলিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সব বই ভিজে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত কুমার দাস ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর কত ভুগবে সিলেটবাসী। ও মেয়র সাহেব দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে তো শহর ডুবে যাচ্ছে, আর কত? এখন নদী উপচে পানি ঢুকছে এটা তো বলার সুযোগ নেই। এবার আপনি কি বলেন সেটাই শোনার অপেক্ষায়!  এতো এতো উন্নয়ন এখন বৃষ্টির পানির নিচে।’

দ্যা ডেইলি স্টারের ফটো জার্নালিস্ট শেখ মো. নাসির ফেসবুকে লিখেন, ‘নগরীতে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। আশাকরি আগামী ২৫ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা গেলে ৩০ বছর পর যতই বৃষ্টি, হোক,  প্রবল বৃষ্টি, মেয়র বৃষ্টি, কাউন্সিলর বৃষ্টি হোক না কেন নগরীতে বন্যা হবে না। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং নির্বাচিত করে যেতেই হবে। আর পরিকল্পিত নগরীর স্বপ্ন দেখতে হবে। তোমার আমার মার্কা কি…!’

ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মজা করে দৈনিক ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুল ইসলাম সবুজ লিখেন, ‘ড্রেনের মুখে পেলাষ্টিক (প্লাস্টিক), মেয়র মোদের রোমান্টিক।’

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মঈন উদ্দিন লিখেন, ‘যতোসব ফালতু উন্নয়ন! ড্রেন কোথায় আর রাস্তা কোথায়।’

প্রসঙ্গত, এর আগেও ভারি বর্ষনে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জলাবদ্ধতার জন্য সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধিকে দায়ি করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে থাকায় ছড়া-খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে উল্টো নদীর পানি শহরে ঢুকছে। তাই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। এবার নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে থাকলেও নগরবাসীকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হলো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *