এক দশক পর চালু হচ্ছে এমসি কলেজের মেডিকেল সেন্টার

সিলেট

এক দশক পর চালু হচ্ছে মুরারিচাঁদ কলেজের মেডিকেল সেন্টার। কলেজটির ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য এই মেডিকেল সেন্টার চালু করা হয়। কলেজের ১৪ হাজার আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও কলেজের কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই মেডিকেল সেন্টার।

ঘুরে দেখা যায়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের পূর্ব দিকে একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের অবস্থান। টিন শেডের দু’চালা ঘরের এই মেডিকেল সেন্টারের সামনে একসময় ‘মেডিকেল সেন্টার, এমসি, কলেজ, সিলেট’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও কালের বিবর্তনে সেটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্টাফরাও ভুলতে বসেছেন মেডিকেল সেন্টারের নাম। দীর্ঘদিন থেকে অব্যবহৃত থাকায় ভেঙে পড়েছিল টিন। দীর্ঘদিন থেকে মেডিকেল সেন্টার বন্ধ থাকলেও মহামারি করোনার আগ পর্যন্ত এর কার্যক্রম চলতো কলেজের ৭ম ব্লকের একটি কক্ষে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার থাকলেও কখনো সেই কক্ষে বসে রোগী দেখেননি। ডাক্তার নির্দিষ্ট কক্ষে না বসায় শিক্ষার্থীরাও ভুলে গেছেন মেডিকেল সেন্টারের কথা। তাই, বাইরের ডাক্তার ও ফার্মেসি থেকে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেডিকেল সেন্টারটি যখন প্রথম চালু হয়, তখন থেকেই এটি খোলা থাকতো শুধু কলেজ টাইমে। এর পরে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যসেবা পেতেন না কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে মেডিকেল সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলার দাবী ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, মেডিকেল সেন্টার চালুর প্রথম দিকে দুজন চিকিৎসক, সেবিকা ও দশ শয্যা বিশিষ্ট আন্ত:বিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও গত কয়েক বছর থেকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ হোস্টেলের মেডিকেল সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণের অধিকার থেকে তরা বঞ্চিত। গেল দেড় বছর থেকে ডাক্তার থাকলেও বিষয়টি জানেন না কলেজের শিক্ষার্থীরা। মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জানান, এক সাথে তিনটি জায়গায় তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কলেজের মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল অফিসার কান্তা দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমাকে একসাথে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিভিল সার্জন অফিসের সাথে এমসি কলেজের মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বও সামাল দিতে হয়। কলেজে পরীক্ষা আর বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকলে আমার এখানে আসা হয় না।’

ছাত্রাবাসের মেডিকেল সেন্টারে কখনো কী গিয়েছিলেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘মেডিকেল সেন্টার অকেজো থাকায় সেখানে বসা সম্ভব না। এদিকে ছাত্রাবাসের একটি ব্লকে একটি রুম দিলেও সেটা একজন মহিলা ডাক্তারের জন্য নিরাপদ না। সেজন্য সেখানে যাওয়া হয়নি বলে তার মন্তব্য।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিক আহমদ বলেন, কলেজে মেডিকেল সেন্টার আছে। অথচ গত ২ বছর থেকে পড়ালেখা করে আসলেও সেটা জানিনা।
ছাত্রবাসের ৫ম ব্লকের ছাত্রাধিনায়ক (প্রিফেট) আলী আজম বলেন, আমাদের একমাত্র মেডিকেল সেন্টারটি দ্রুত চালু হোক। এটি ঠিক থাকলে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া যেতো। কিন্তু এতদিন মেডিকেল সেন্টারটি ভাঙাচোরা থাকায় কোন সমস্যা হলে বাইরের হাসপাতালে যেতে হয়।

২৪ ঘণ্টা ছাত্রাবাসে ডাক্তার থাকা প্রয়োজন বলে ছাত্রাবাসের ৭ম ব্লকের ছাত্রাধিনায়ক (প্রিফেট) আপন তাহসান জানান, ছাত্রাবাসে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার থাকা জরুরি। বিগত দিনে অনেকে মধ্যরাতে অসুস্থ হয়েছে। মেডিকেল দূরে ও অভিভাবক সাথে না থাকায় অনেক বেগ পোহাতে হয় চিকিৎসা পেতে।
কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোঃ তৌফিক এজদানী চৌধুরী জানান, বন্ধ থাকা মেডিকেল সেন্টার শিগগিরই চালু হবে। এখান থেকে কলেজের সকল শিক্ষার্থী চিকিৎসা সেবা পাবেন। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ডাক্তারকে ফোন দিলে ডাক্তার যেকোনো সময়ই আসবেন বলে জানান তিনি।
মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মোঃ আশরাফুল কবির বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে মেডিকেল সেন্টারটির মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই এটি চালু হবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: এস এম শাহরিয়ার জানান, মুরারিচাঁদ কলেজের মেডিকেল সেন্টারটি ছিল মূলত স্কুল হেলথ ক্লিনিক। শহরকেন্দ্রিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এ ধরণের হেলথ সেন্টার কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে একজন ডাক্তারকে একাধিক স্থানে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *