এবারও ঘুর্ণিঝড়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াল সুন্দরবন

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এই গতিবেগে উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এবারও প্রকৃতির ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটা সামলে উপকূলের বিপুলসংখ্যক মানুষ ও জনপদকে রক্ষা করেছে এই ম্যানগ্রোভ বন।

তবে ঝড়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের পুরো প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে খুলনার কয়রা সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, সুন্দরবন যেন বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় প্রকৃতি নির্মিত দেয়াল। প্রতিবারই ঝড়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সুন্দরবন। এবারও তা-ই করেছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ঠেকিয়ে দিয়ে খুলনার কয়রা অঞ্চলকে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে। তবে জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবন প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ও বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার কারণে সামনের দিনগুলোতে পশুপাখির পানির সংকট তৈরি হতে পারে।

এ জন্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন তিনি।

জানা গেছে, মিষ্টি পানির আধার হিসেবে সুন্দরবনে রয়েছে ১১৫টি পুকুর। এর মধ্যে শুধু বিভিন্ন প্রাণীর জন্য ছোট আকারের ৩৫টি পুকুর। আর মানুষ ও প্রাণী উভয়ের জন্য ৮০টি পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলো সব লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের বেশির ভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। বন্য প্রাণীর বিচরণের সব জায়গা প্লাবিত হয়েছে। বিচরণের শুকনা জায়গা না পেয়ে লোকালয়ে চলে আসছে হরিণ ও বন্য প্রাণী। তলিয়ে গেছে সব জেটি স্টেশন। ফলে বন এলাকায় যোগাযোগ একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে পুকুরে লোনা পানি প্রবেশের কারণে সামনের দিনগুলোতে বন্য প্রাণীর খাওয়ার পানির তীব্র সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রকৃতির ঢাল হিসেবে কাজ করে সুন্দরবন। এবারও সেটি করেছে। তবে বনের ভেতর গাছপালা ও পশুপাখির ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের মানুষ ও প্রাণীর জন্য মিঠা পানির আধার হিসেবে ১১৫টি পুকুরের সবই তলিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে বনের মধ্যে পানির সংকট তীব্র হতে পারে। বনের ভেতরে কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে সাত ফুট পানি প্রবেশ করেছে।

প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, ‘এবারের ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরার তুলনায় বাগেরহাটে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। এখনো বনের কেনো প্রাণী মারা যাওয়ার খবর আমরা পাইনি। আমরা চেষ্টা করব বর্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের পানি বদল করতে। এ ছাড়া দু-এক দিনের মধ্যে বনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করব।’

ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের প্রকৃতি লণ্ডভণ্ড হলেও মানুষ ও জনপদের ক্ষতি হয়েছে কম, যদিও মূল আঘাতটি সামান্য পশ্চিমে সরে গিয়েছিল। রিমালের তাণ্ডবে সাগরের পানি ফুঁসে ওঠে। সুন্দরবনের বেশির ভাগ এলাকা দু-তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা পাঁচ-ছয় ফুটও হয়েছে।

নদীগুলোতে পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম।

বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার বিকেলে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার হড্ডা গ্রামের হড্ডা ফাঁড়ির অধীন কয়রা নদীতে ভেসে এসেছে একটি হরিণ শাবক। পরে বনরক্ষীরা শাবকটিকে নিয়ে বনের মধ্যে টহল ফাঁড়ির পুকুরের উঁচু পারে ছেড়ে আসেন। স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের পানি বেড়েছে। উঁচু জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি টহল ফাঁড়ির জেটিসহ বনকর্মীদের আবাসস্থল (ব্যারাক) ও কার্যালয়। বন্য প্রাণীর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় বনের মধ্যে টহল ফাঁড়িগুলোর উঁচু পুকুরপারে এক পাল হরিণকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *