এমসিতে ‘বহিরাগত ছাত্রলীগ’ নেতার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা

সিলেট

সিলেট এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহিন তালুকদারের নেতৃত্বে এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম এ কিউ এম সামসুল হুদা ইমরান। তিনি এমসি কলেজের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে তার ওপর হামলার এই ঘটনা ঘটে।

পরে তার (ইমরানের) সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন।

হামলার শিকার সামসুল হুদা ইমরান শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে সিলেটটুডেকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে আমি আবাসিক হলে (পঞ্চম ব্লকে) ছিলাম। এমন সময় আমাদের হলের পাশেই হাল্লা-চিৎকার শুনে বের হই। দেখি চতুর্থ ব্লকের এক ছোটভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে হলে থাকা বহিরাগত কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবকের। এসময় ওই ছোট ভাই (চতুর্থ ব্লকের) জানায়, ‘‘সে সাইকেলে হলে ফিরছিল। বহিরাগত ওই ছেলেরা তাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই মারতে উদ্যত হয়’’।

‘‘এ কথা শুনে আমি ঘটনার প্রতিবাদ করি। এসময় হঠাৎ সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহিন তালুকদার ও ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রাহীসহ ১০-১২ জন এসে উপস্থিত হয়। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। কোনো কথা না শুনেই মাহিন তালুকদার আমার নাকে ও বাম চোখের ওপরে ঘুষি দেয়। তার হাতে স্টিল জাতীয় কিছু ছিল। এতে আমার বাম চোখের ওপরে ফেটে যায়। এসময় তার সাথে থাকা অন্যরাও মারধর করেছে আমাকে। ৪র্থ ব্লকের শিক্ষার্থীকেও মারধর করেছে তারা। সহপাঠীরা আমাকে উদ্ধার করে ওসমানীতে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। বাম চোখের ওপরে ৫টি সেলাই লেগেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি নিচ্ছি।’’

ইমরান অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘‘তারা পূর্ব থেকে (অন্তত ২ মাস) হামলার পরিকল্পনা করেছে। মাহিন তালুকদারের নেতৃত্বে বহিরাগতরা হোস্টেলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। টাকা না দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খাবার খেয়ে নিচ্ছে। মিছিল মিটিং-এ মেন্টালি টর্চার করে নিয়ে যায়।’’

কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সম্প্রতি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলনে দেলোয়ার হোসেন রাহীকে সভাপতি দেখতে চাই লিখে পোস্ট করার কথা বলে মাহিন তালুকদার। অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা এমন পোস্ট করানো গেলেও ইমরান অসম্মতি জানায়। এরই জের ধরে ইমরানের সাথে বহিরাগত জুনিয়র দিয়ে নানা ধরনের অসঙ্গতিমূলক আচরণ করায় দেলওয়ার হোসাইন রাহি ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহিন তালুকদার।

অভিযোগ ওঠেছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হলেও মাহিন তালুকদার অবৈধভাবে ছাত্রাবাস দখল করেই বাস করছে। এমনকি মাহিন তালুকদার এম সি কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, ট্রান্সফার বাণিজ্যের সাথে জড়িত। এ নিয়ে এমসি কলেজ প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহিন তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হয়।

মাহিন তালুকদার বলেন, ‘‘ছোট ভাই দুইটার সাথে ঝামেলা হয়েছিল ইমরান ও অন্য একজনের। আমি খাবার খেয়ে ফেরার সময় বিষয়টি দেখেছি। পরে এটা শেষ করে দেয় এক ছোট ভাই। কিন্তু যে শেষ করে দিছে তাকে মারতে গেছে অন্যদুইজন। পরে আমি নিজে গেছি সবার সিনিয়র হিসেবে। তিনবার চেষ্টা করেছি সমাধান করতে, পারিন। পরে দুইজনে দুটি থাপ্পড় দিয়েছি। এতে ইমরানের নাকে একটু রক্ত আসে।

‘‘ছোট ভাইদের দিয়ে ইমরানকে চিকিৎসা করাতে দেই। কিন্তু সে রাগ করে ওসামনীতে গিয়েছে। রাতে সিনিয়র নেতা মিঠু দা ফোন দিয়েছিলেন, তার সাথে কথা হয়েছে। সে (ইমরান) আমার ছোট ভাই। তার সাথে কোনো দূরত্ব নেই আমার। বড় ভাই হিসেবে আমি তাকে শাসন তো করতে পারি। এটা নিয়ে অভিযোগ (সাংবাদিকদের কাছে) করার কি আছে। আমি এখানে (এমসিতে) থাকিও না। লন্ডন রোডে থাকি। আমি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রশ্নই ওঠে না মারামারি করার।’’

প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ক্যাম্পসে রাত ১১টায় কেনো ছিলেন? জানতে চাইলে মাহিন বলেন, ‘‘রাহী আমার বন্ধু। তাকে সাপোর্ট দিতে অনুষ্ঠান হলে মাঝে মাঝে আসি। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আসছিলাম। রাতে আমার বাসায় থাকি। রাহির সাথে আসছিলাম। তখন দেখি তারা মারামারি করতেছে। ভাঙাতে গিয়ে দুইজনকে থাপ্পড় দিয়েছি।’’

তবে তার (মাহিনের) বিরুদ্ধে কলেজে ভর্তি বাণিজ্যসহ ওঠা অন্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি একটা ঝামেলা হয়েছে। পরে এটা ওখানকার সিনিয়র নেতারা রাতে শেষ করে দিয়েছেন। আমি বিকেলে গিয়ে আহতদের দেখব।’’

শাহপরান থানার ওসি আবুল খায়ের শুক্রবার (২২ জুন) বিকেলে বলেন, ‘‘এরকম তথ্য আমাদের কাছে আসেনাই। আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *