সাক্ষ্য শুরু না করায় রাষ্ট্রপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মামলার বাদী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার বর্বরোচিত গণধর্ষণ ঘটনার দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে।
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলার বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। গেল বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণ মামলার ও চলতি বছরের মে মাসে চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও আজ পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুই হয়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, গত বছর ধর্ষণ মামলার ও গত মে মাসে চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও আজও কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন। উচ্চ আদালত ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত আদেশও দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি পাওয়ার পর মামলার ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করা হবে। আমরা ন্যায় বিচার চাই।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, আমরা সাক্ষ্য গ্রহণের জন্যে সবসময়ই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বাদী এই ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যেতে চান। তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিটও করেছেন। উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি এখনো আমরা পাইনি। এ জন্যে আপাতত এ ট্রাইব্যুনালে মামলার কার্যক্রম এভাবেই চলছে। উচ্চ আদালতের আদেশের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন ঠিক। বাদীপক্ষ ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছেন।
জানা গেছে, দুটো মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও দীর্ঘদিনেও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু না হওয়ায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে মামলার বাদী গেল ১ আগস্ট বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি রিট দায়ের করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৬ আগস্ট দুই মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির জন্যে প্রক্রিয়া গ্রহণে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি বাদীপক্ষের হাতে এখনো আসেনি বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এর আগে ২৭ জুলাই আসামি রবিউল ইসলামের জামিন শুনানিতে মামলার বিচার বিলম্বিত হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গেল বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলার জেলা মনিটরিং কমিটির সভায় আলোচিত গণধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও এরপর আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অবশ্য, পরে বলা হয়, ভুলবশতঃ এমনটি হয়েছিল।
সূত্র জানায়, সাক্ষ্য কেন শুরু করা হয়না মর্মে রাষ্ট্রপক্ষকে গত ২১ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার মামলার সর্বশেষ ধার্য তারিখে এর জবাব দেয়া হয়নি। ওইদিন কোনো আসামিকেও এজলাসে তোলা হয়নি বলে বাদী পক্ষ জানিয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক ৮ আসামির উপস্থিতিতে গত ১১ মে বুধবার গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করেন। এর আগে গেল বছরের ১৭ জানুয়ারি রোববার ওই ট্রাইব্যুনালে সকল আসামির উপস্থিতিতে অপহরণ, গণধর্ষণ ও গণধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়।
গণধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠনের পর ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে এক সাথে একই আদালতে মামলা দু’টি চালানোর আবেদন করায় ওই আবেদনটির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে যাননি। ওইদিন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ থাকার পরও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে যাননি মামলার বাদীসহ ৫ সাক্ষী। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত। ওইদিন গ্রেফতারী পরোয়ানামূলে মামলার বাদীকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওইদিন উচ্চ আদালত শুনানি শেষে আদেশ দিলে বাদীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে শুরু করার আবেদন করেন বাদীপক্ষ। শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি খারিজ করে দেন। এরপর বাদীপক্ষ মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম একই আদালতে সম্পন্নের জন্য গেল বছরের জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালতে একটি ফৌজদারি বিবিধ মামলা করেন। ফৌজধারি বিবিধ মামলা নম্বর -৮৯৫২/২০২১। ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ মামলার শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম এক সাথে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।
গণধর্ষণের ঘটনায় ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার পুত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পুত্র অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের পুত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পুত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭) অভিযুক্ত করে দন্ডবিধির ৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৩৮৫/৩৪ ধারা তৎসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী, ২০০৩) এর /৭/৯/(৩)৩০ ধারায় অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেয়া হয়।
গ্রেফতারের পর ৮ আসামির সকলেই অকপটে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে সরাসরি গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। ৮ আসামিদের সকলেই ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপে সক্রিয় ছিল। বর্তমানে তাদের সকলে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে।
ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে আসামি করে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯/১৯ এ ধারায় অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয়। ঘটনার ১ মাস ২৭ দিন পর অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ঘটনার পরে গ্রেফতারকৃত ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওসমানীর ওসিসি’র মাধ্যমে ৮ আসামির ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে প্রেরণ করে পুলিশ। নমুনা সংগ্রহের প্রায় ২ মাস পর ডিএনএ রিপোর্ট এসে পৌছে। ডিএনএ রিপোর্টে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর ও মাহবুবুর রহমান রনির ডিএনএ ‘ম্যাচিং’ পাওয়া যায়।
এদিকে, আইনুদ্দিন ও মিসবাহ উদ্দিন রাজন’র ডিএনএ ‘মিক্সিং’ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ডিএনএ রিপোর্ট’র ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ৬ জনই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছিল। আইনুদ্দিন ও মিসবাহ ধর্ষণের সময় ‘কিছু ব্যবহার করায়’ ম্যাচিং এর বদলে রিপোর্টে মিক্সিং পাওয়া যায়। বাকী ৪ জন কোনো কিছু ব্যবহার না করে সরাসরি ধর্ষণ করে। বর্বরোচিত এ ঘটনার পরে আসামিরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আত্মগোপন করে। সাইফুর রহমানকে ছাতক থেকে, তারেকুল ইসলাম তারেককে দিরাই থেকে, মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জ সদর থেকে, অর্জুন লস্করকে মাধবপুর থেকে, রবিউল ইসলামকে নবীগঞ্জ থেকে ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে হরিপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। আইনুদ্দিন ও মিসবাহ উদ্দিন রাজনও আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর আদালত তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে দেন। রিমান্ড শেষে পর্যায়ক্রমে ৮ আসামি আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। জবানবন্দিতে আসামিরা গৃহবধূকে তুলে নেয়াসহ গণধর্ষণ ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
ভয়ঙ্কর সেই সন্ধ্যা
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এর আগে শাহপরান (রহ.) মাজারও ঘুরে আসেন তারা। সন্ধ্যার পরে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা থামেন। এ সময় কয়েক যুবক ওই স্বামী ও তার স্ত্রীকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭নং ব্লকের ৫ম তলা বিল্ডিং এর সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। তারা দম্পতির সাথে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আটকে রাখে তাদের প্রাইভেট কারও। ছাত্রাবাস থেকে টিলাগড় পয়েন্টে এসে যুবকটি পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ আসতে বেশ সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ নির্যাতিতাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। শাহপরান থানার মামলা নং- ২১। তারিখ-২৬/০৯/২০২১। দেশের অন্যতম পুরনো বিদ্যাপীট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণের সাজার আইনের পরিবর্তন করে মৃত্যুদন্ডের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল ২০২০ পাশ হয়। এ ঘটনায় এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসানকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ৪ জনের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে।