এম এম শাহীনের ডিগবাজি, কুলাউড়া বিএনপির সংবাদ সম্মেলন করে নিন্দা

মৌলভীবাজার

স্টাফ রিপোর্টারঃ কুলাউড়ার আলোচিত সমালোচিত নেতা সাবেক এম.পি এম এম শাহীনের ডিগবাজিতে ক্ষোভ ও  নিন্দা জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি।

১৯ নভেম্বর সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলের দু:সময়ে তার এই ডিগবাজির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং দলের নেতাকর্মীদের তার সাথে সম্পর্ক না রাখার হুঁশিয়ারিও দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান এম.পি হওয়ার জন্য এম এম শাহীন নিজ স্বার্থে বার বার দলের সিন্ধান্ত আগ্রাহায্য করে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল দলের এই দু:সময়ে অত্যন্ত তার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তিনি দলের সিন্ধান্ত মেনে দল, দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের এই ক্রান্তিলগ্নে দলের একজন নিবেদীত কর্মী হয়ে কাজ করবেন। কিন্তু তার অতীত স্বভাবসুলব আচরণ বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয়নি। তিনি দেশ নেত্রী দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার দু:সময়ে তার ব্যক্তি স্বার্থে ডিগবাজি দিলেন। তার এই হীনমন্যতামূলক ডিগবাজিতে কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ সর্বস্থরের কুলাউড়া বাসী তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছে।  তার নিন্দনীয় এ কার্যক্রলাপের পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের সাথে তার আর দূরতম কোন সম্পর্ক নেই ও কখন থাকবেনা।

সোমবার ১৯ নভেম্বর বিকেলে কুলাউড়া শহরের একটি অভিজাত হোটেলে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শওকতুল ইসলাম শকু। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন কুলাউড়াবাসির নিশ্চয় জানা আছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ১ম বারের মত তাকে এম.পি নির্বাচিত করেন। তারপর ২০০১ সালে কুলাউড়ার জাতীয়তাবাদী শক্তির সকল পর্যায়ের জনগণ তাকে পুনরায় ২য় বারের মত এম.পি নির্বাচিত করেন।  পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তৎকালীন  প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুলাউড়ায় এসে তাকে দলে ফিরিয়ে নিয়ে ধানের শীষ প্রতীক তার হাতে তুলে দেন। পরের ইতিহাস আপনাদের জানা। সেই নির্বাচন আর হয়নি। আসলো ১/১১। ফখর উদ্দিন ও মঈন উদ্দিনের সরকার। মাইনাস ১/২ ফর্মুলায় এগুতে থাকে সেই সময়কার সেনা সমর্তিত সরকার। আমরা অত্যন্ত দু:খের সাথে লক্ষ্য করলাম ওই সময়ে সেনা সর্মতিত সরকারের কিংস পার্টি নামে খ্যাত ড.ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর পি.ডি.বি নামক দলে যোগদানের উদ্দেশ্যে তার বাসভবনে একটি সভা আহবান করেন। ওই সভার আগে নতুন দল নিয়ে আলোচনার কোন ম্যাসেজ নেতাকর্মী বা কাউকেই জানানো হয়নি। সভায় নতুন দলে যোগদানের নানা যুক্তি ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এম এম শাহীন। কিন্তু সে দিন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে দলের দূর্দিনে উপস্থিত কেউ তার ওই আহবানে সাড়া দেয় নি। যার ফলে তিনি একাই ওই দলের সদস্য হন। আর দল বল নিয়ে বড় পরিসরে ওই দলে আগাতে পারেননি। এমনকি গেল জেলা পরিষদ নির্বাচনে বারন না শোনে দলের সিন্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। আজও আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করলাম যখনি দেশ একটি সংকটময় মুহুর্তে আমাদের মা দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি বন্দি ঠিক সে সময় তিনি আবারো তার বাসায় একটি সভা আহবান করে দল বদলের ইঙ্গিত করেন।

১৩ নভেম্বর এম এম শাহীন তার বাসায় হঠাৎ এই সিন্ধান্ত নেন। এসময় ওই সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে দেশের একটি সংকটময় মুহুর্তে এভাবে দলবদল না করে ও ধর্য্য ধারনের অনুরোধ করা হয়। তারপরও এম এম শাহীন আমাদের কারো কোনো অনুরোধ ও পরামর্শ না মেনে সম্প্রতি বাপ-বেটার দল বিকল্পধারায় যোগদান করেন। বার বার তার এমন ডিগবাজিতে আমরা ব্যতিত,ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।

১৩ নভেম্বরের পর থেকে এম এম শাহীনের সাথে কুলাউড়া বিএনপির আর কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। উপজেলা বিএনপি,পৌর বিএনপি ও ১৩টি ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা যাতে  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এম এম শাহীনের সাথে যোগাযোগ না রাখেন সেই অনুরোধ রাখছি। যদি কেউ আবেগের বশিবর্তী হয়ে তার সাথে সম্পর্ক রাখেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দলীয় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির স্বার্থে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যিনি আসবেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষেই কাজ করবো। এতে আমাদের কোন দ্বিধা বিভক্তি থাকবেনা।  সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় সরকারের দমন, নিপীড়ন মনোভাবের কারণে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুুতি ও অন্যান্য কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্নভাবে বাঁধা দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ অন্যান্য নেতাকর্র্র্র্র্মীদের উপর মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধেরও জোর দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, সাধারন সম্পাদক মোঃ রেদওয়ান খাঁন, যুগ্ম সম্পাদক জয়নুল ইসলাম জুনেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার মুহিবুর রহমান মলাই, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বিএনপি নেতা রফিক মিয়া ফাতু, মাসুক আহমদ, মেস্তাক আহমদ চৌধুরী মামুন, নজরুল ইসলাম, যুবদল নেতা পৌর কাউন্সিলর কায়ছার আরিফ, মঞ্জুরুল আলম খোকন, হারুনুর রশীদ, রাসেল আহমদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির মণু, যুবদল নেতা সুফিয়ান আহমদ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সুরমান আহমদ প্রমুখ। উল্লেখ্য সম্প্রতি এম এম শাহীন মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বিকল্পধারা যোগদান করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *