ওসমানীনগরে স্বাস্থ্য বিভাগে লুটপাটের মহোৎসব

সিলেট

অফিসে কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটা করে  নিজের জন্মদিন পালনসহ নানা ঘটনার বহুল আলোচিত, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাহারুল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি এখন ওপেনসিক্রেট। যোগদানের পর থেকে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বাস্থ্য বিভাগের যেকোনো কাজে কমিশন বাণিজ্য, করোনা সহায়তার অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ভাতা, কর্মচারীদের আনুষঙ্গিক ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নবপ্রতিষ্টিত উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগঘিরে লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠায় উপজেলা জুড়ে টক অব দ্য টাউনের পরিণত হয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে সম্প্রতি তাকে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় ষ্ট্যাান্ড রিলিজ করা হলেও উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বদলীর আদেশ বাতিল করিয়ে বহাল তবিয়তে অনিয়ম কায়েম করে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরাসহ সেবাগ্রহীতাদের মনেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ নিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। গুঞ্জন রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকায় কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে এমন দোহাই দিয়ে যোগাদানের পর থেকে নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা- কর্মচারীরা জানান, যোগদানের পর থেকে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নানা বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয়দের বঞ্চিত রেখে নিজের আত্বীয়-স্বজনদের ওসমানীনগরে এনে মাষ্টার রোলে চাকুরী দিয়ে তাদের বেতনের টাকাও নিজের পকেটস্থ ছাড়াও করোনাকালিন ভাতার টাকা আতœসাৎ করে প্রায় অর্ধকোটি টাকার নতুন গাড়ি কিনেছেন তিনি।তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অনীহা প্রকাশ করলে এমনকি প্রাপ্য টাকা দাবী করিলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মচারিকে শোকজ,বেতনবন্ধ ও অন্যত্র বদলী করার হুমকি দিচ্ছেন। তাছাড়া স্বারক বহিতে উনার ইচ্ছামতো স্বারক খালি রেখে পুরাতন যেকোন তারিখ বসিয়ে নিজের মন-মতো শোকজ প্রদানসহ কর্মকর্তা কর্মচারীকে ব্যক্তিগত ভাবেও হুমকি দামকি অব্যাহত রেখেছেন জামায়াত শিবিরের অনুসারী ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।তাঁর এসব অপকর্মের চিত্র ঢাকতে খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেছেন সাফাই বাহিনী।

অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজহারুল ইসলাম ওসমানীনগরে যোগদানের পর থেকে উপজেলার কিমিউনিটি ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা নাজুক থাকলেও একটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র ঘোষনার মাধ্যমে নিজের অনুগত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের নিয়ে দিনব্যাপি নানা মনোরঞ্জনে ব্যস্থ থাকেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২৪টি ওয়ার্ডে ৭ মাসের কোভিড ভ্যাকসিনের কাজের সম্মানী ২০২২ সালের ২৮ জুন বরাদ্দকৃত ৯ লক্ষ ১১ হাজার ৮শ ৮০ টাকা ব্যাংক হইতে উত্তোলন করে রেখে দিয়েছেন নিজের একাউন্টে। উপজেলার সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের জন্য সম্মানীর বরাদ্ধকৃত ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা তাঁর অনুগত ও অনিয়মের সহযোগীর ১০ জনের ব্যাংক হিসাবে ২৪ হাজার টাকা করে স্থানান্তরের মাধ্যমে সেই টাকাও করেছেন নিজের পকেটস্থ। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন প্রদানের সরকারী বরাদ্ধের ওয়ার্ড পর্যায়ে মাইকিং ও ক্যাম্পেইনের স্বাস্থ্যকর্মী,স্বেচ্চাসেবীদের সম্মানীর টাকা ব্যাংক হইতে উত্তোলন করে আতœসাৎ করেন তিনি।সংশ্লিষ্টরা এসব সম্মানীর টাকা নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তিনি পরবর্তীতে প্রাপ্য টাকা না দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো টাকা প্রদান করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্মারক নং: ১৭২৪ এর আদেশে  সারা দেশের ন্যায় ৫-১১ বছর বয়সী সকল শিশুকে টীকা প্রদানের জন্য প্রতি ইউনিয়নে ১৩ দিনব্যাপী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের আদেশ অমান্য করে নিজের মনগড়া নিদের্শনা জারি করে একটি টিমের মাধ্যমে ১০৪ দিনের কর্মসূচি ৫৫দিনে সম্পন্ন করে বরাদ্ধের টাকা আতœসাৎতের পায়তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে উধ্ধতন কতৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও অনুগতদের দিয়ে সাফাই স্বাক্ষি ও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারী কর্মকর্তাদের কর্মস্থলের পাশ্ববর্তী এলাকায় রাত্রি যাপন করার নিয়ম থাকলে তিনি সুনামগঞ্জে বাসায় থেকে নিজের ইচ্ছামতো ওসমানীনগরের কর্মস্থলে আসলেও সপ্তাহের অধিকাংশ দিন তিনি সুনামগঞ্জে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখায় ব্যস্থ থাকেন। অফিসারদের নিজের অনুগত রাখতে ও মনগড়া স্বাক্ষর আদায় করতে উপজেলার অস্থায়ী  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে আউটডোর সার্ভিসের নামে সকল মেডিক্যাল অফিসারদের একত্রিত করে দিনব্যাপী খোশগল্পসহ নানা ফটো সেশন করায় সেবা গ্রহীতারা হচ্ছে সেবা বঞ্চিত। ফলে তাজপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্যালয় ঘোষনার পর ৯জন মেডিকেল অফিসার যোগদান করলেও কর্মরত চিকিৎসকরা ব্যস্থ থাকেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে বাণিজ্যিক রফা দফা নিয়ে কিংবা অলস সময় কাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাজারুল ইসলামের কক্ষে। হাসপাতালে আগত সেবাগ্রহিতাদের সেবা দেন অফিস সহায়ক ও কম্পাউন্ডাররা। অস্থায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সালিশ ব্যাক্তিত্ব দুদু মিয়া জানান,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা:মোজাহারুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। প্রতিদিন সেবাগ্রহীতাদের সাথে কিংবা অনিয়ম নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় জগড়া লেগে আছে যা নিয়ে ছোট কাট সালিশ বৈঠকও হচ্ছে। তার ধাম্বিকতার কাছে যেন দেশে আইন বলে কিছু নেই।ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আচার-আচরন মাতলামীর বহিপ্রকাশ।নিজের গাড়ি দিয়ে মটোর সাইকেল আরোহীর চাপা দেয়ার পর ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশ এনে ধাম্বিকতা শুরু করলে স্থানীয়রা তাকে অবরোদ্ধ করে রাখেন। এ বিষয়ের সালিশ বৈঠকটিও রয়েছে প্রক্রিয়াদিন।

এ ব্যপারে উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: মোজাহারুল ইসলাম অভিযোগগুলি অস্বীকার করে বলেন,সরকারী টাকা আতœসাৎতের কোনো সুযোগ নেই।সরকারী বরাদ্ধের উত্তোলিত টাকা যথা নিয়মে বন্ঠন করার পরও আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করা হযেছে যার তদন্তও হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *