ওসমানীনগরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর মারা যাওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের মেয়ে সামিরা ইসলামের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সামিরা মারা যান। তিনি ঘটনার পর ১১ দিন হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন তিনি। এর আগে সামিরার বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাই মাইকুল ইসলাম মারা যান।
জানা যায়, গত ১২ জুলাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতুপুর) গ্রামের রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকায় একসপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই ওসমানীনগরের তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন।
এরপর দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, গত বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওসমানীনগরের তাজপুরস্থ স্কুল রোডের বাসায় ফিরে যান সামিরার মা হোসনে আরা বেগম ও ভাই সাদিকুল ইসলাম। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও তাদেরকে আরো কয়েকদিন নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার।
তিনি জানান, গত ২৬ জুলাই অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা ও ছেলেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সামিরার জ্ঞান ফিরেনি। সামিরা কিডনি ও লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় বলে জানান ডা. গাফ্ফার। অবশেষে ঘটনার ১১ দিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন সামিরা।
এদিকে, গত বুধবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি হাসপাতাল ফেরত হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় হোসনে আরা পুলিশ সুপারকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে বাসার ভেতর জেনারেটর চলতো। জেনারেটর চালুর পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হতো। বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। জেনারেটর চালুর পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
পুলিশের ধারণা, ঘটনার রাতে দীর্ঘসময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও অপর এক ছেলে ও মেয়ে। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরণের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে পুলিশ মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, সাধারণত বাসা-বাড়িতে জেনারেটর বাইরে থাকে। কিন্তু ওই বাসার ভেতরে জেনারেটর ছিল। পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বাসার জেনারেটর চালু করা হলে কিছুক্ষণ পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার রাতে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে এই ট্র্যাজেডি ঘটতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। জেনারেটরের ধোঁয়া সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ধোঁয়া থেকে কি ধরণের বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে পরীক্ষার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে তা জানা যাবে।এই ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ জানতে মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
শেয়ার করুন