বিশেষ প্রতিবেদক:‘ব্রাদার’ ঈসরাইল আলী সাদেক। একসময়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিস, অ্যাকাউন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করতো তারই লোক। নার্সদের বদলি, পদায়ন সবই ছিল ‘ব্রাদার’ সাদেকের হাতে। পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওসমানীর প্রশাসনেও ছিল তার একক আধিপত্য। এ কারণেই ‘ব্রাদার’ সাদেক যা বলতো ওসমানী’র প্রশাসনও তাই করতো।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতি, দলবাজির মহানায়ক ‘ব্রাদার’ সাদেক। সে নিজে দায়িত্ব পালন করতো না। সব সময় বসে থাকতো পরিচালক, উপ-পরিচালক কিংবা সহকারী পরিচালকদের রুমে। সেখানে বসেই সে এক হাতে হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করতো। পলাতক আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি এ. কে আব্দুল মোমেনের নিজের লোক পরিচয় দিয়ে সে এসব করতেন। ফলে তার কাছে অসহায় ছিলেন সবাই।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুস লেনদেনের ঘটনায় দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন ‘ব্রাদার’ সাদেক। সম্প্রতি তিনি জেল থেকে বের হয়েছেন। আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি এ. কে আব্দুল মোমেন এখন পলাতক। নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে আওয়ামী লীগ ঘরনার এই ‘ব্রাদার’ এখন বিভিন্ন মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতার সাথে যোগাযোগ করছেন। ওসমানী মেডিকেলে নিজের একক আধিপত্য আবার ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুরাতন সিন্ডিকেটকে আবারও সক্রিয় করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩রা অক্টোবর রাতে সিলেটের আলমপুর থেকে ১০ বোতল প্যাথিড্রিনসহ র্যাব-৯ আটক করে ‘ব্রাদার’ সাদেককে। এরপর ২০২৪ সালে ৯ জানুয়ারি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুস লেনদেনের সময় নগদ টাকাসহ ‘ব্রাদার’ সাদেকের দুই সহযোগী নার্সকে আটক করা হয়। এ সময় ঘটনার মূল অভিযুক্ত নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ‘ব্রাদার’ ইসরাইল আলী সাদেক কৌশলে পালিয়ে যান। পরে ২০২৪ সালে ৩ মার্চ রোববার আদালতে জামিন নিতে এসে আটক হন ‘ব্রাদার’ সাদেক। সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে সাদেককে ধরতে একাধিক অভিযান চালালেও তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল তার দুর্নীতির নানা চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
এখনও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে সাদেক সিন্ডিকেটরা সক্রিয়। নানাভাবে ভীতি সৃষ্টি করে তারা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। হাসপাতালের প্রশাসনের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে নীরব। সিলেট বিভাগের প্রায় দেড় কোটি মানুষের শীর্ষ চিকিৎসালয় হচ্ছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে গোটা বিভাগ থেকেই আসেন রোগীরা। কিন্তু হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির কাছে অসহায় রয়েছেন রোগীরা। এর প্রতিবাদ করলে হাসপাতালে নানাভাবে রোগীর স্বজনদের হেনস্তার শিকার হন।
আগামী পর্বে আসছে বিস্তারিত….
শেয়ার করুন