সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফদের অনিয়ম-দুর্নীতি কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্নীতির সংখ্যা। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খানের নেতৃত্বে ওয়ার্ডের কর্মরত স্টাফরা বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান সিলেট ওসমানী হাসপাতালে দুর্নীতির শেকড় গেড়েছেন। তিনি হাসপাতালের আলোচিত ঘুষখোর ওয়ার্ডবয় সোহেল আহমদকে শেল্টার দিচ্ছেন। এছাড়াও সিলেট ওসমানীত মেডিকেলে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানীর মেয়াদ চলতি জুন মাসে শেষ হবে। এই মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য ইতিমধ্যে ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে ঘুষ দুর্নীতির দায়ে ওয়ার্ডবয় সোহেলকে ব্লাক লিস্টে যুক্ত করে ওসমানীত মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। ফলে বিগত দিন হাসপাতালে তার কোনো ধরনের নিয়োগ হয়নি। কিন্তু বর্তমান সিলেট ওসমানীত মেডিকেলে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানীর দায়িত্বরত কর্মচারী রুবেল আহমদ রানা মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাকে সোহেলকে নিয়োগ করেন। হাসপাতালে নিয়োগের পরই শুরু হয়েছে সোহেলের বাণিজ্য। সে ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খানের সাথে হাত মিলিয়ে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বাণিজ্যিক ওয়ার্ড গুলোতে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে স্টাফদের। আলোচিত ঘুষখোর ওয়ার্ডবয় সোহেল শুধু রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও ঔষধ চুরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর তাকে সহযোগিতা করছেন ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক। ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে তিনি রোগীদের ভর্তি, ছাড়পত্র, ওয়ার্ডের পরিষ্কার পরিছন্নতা এবং ওয়ার্ডের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, একের পর এক বেরিয়ে আসছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান ও সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানীর দায়িত্বরত কর্মচারী রুবেল আহমদ রানা’র নানা অপকর্ম। ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান দাপটের কাছে অসহায় হাসপাতালের কর্মচারি সবাই। তিনি নিজের প্রভাব বিস্তার করে নিজেকে প্রভাবশালী দেখিয়ে সবখানেই বিচরণ করেন। হাসপাতালে রয়েছে তার শক্তিশালী বাহিনী। হাসপাতালের ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারাও বর্তমানে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা তার কথার বাইরে যান না কোনো নার্স। ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান ওসমানীত মেডিকেল ব্লাক লিস্টে যুক্ত ওয়ার্ডবয় সোহেলকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় গাইনী বিভাগের ওটিতে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও ওসমান নামে এক সরকারী স্টাফকে হাসপাতালে কাজ করতে হলে তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করতে হবে দাবি করলে, ওসমান তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সমঝোতা করে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে হাসাপাতালের ক’জন নার্সরা জানান, ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাণিজ্যিক ওয়ার্ড গুলোতে নার্স এবং ওয়ার্ডবয়দের কাজের সুযোগ করে দেন। হাসপাতালে আলোচিত ঘুষখোর ওয়ার্ড বয় ব্লাক লিস্টেট সোহেল শুধুই রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও ঔষধ চুরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর তাকে সহযোগিতা করছেন ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক।
একটি সূত্র জানিয়েছে, অর্থপ্যাডিক বিভাগের হাড়ের অপারেশনে ব্যবহৃত ইমপ্ল্যান্ট তথা ধাতু দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পাত, তার, স্ক্রু, বল ইত্যাদি অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং বিক্রি করার পরিকল্পনা করছেন ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান। তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার গড়ে তোলা সাম্রাজ্যে কৌশলে নিজের মতো নিয়ম তৈরী করেছেন। নার্সদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে সার্জারি ওয়ার্ডসহ প্রতি ওয়ার্ড থেকে তাদের মাধ্যমে সপ্তাহিক ও মাসোহারা আদায় করে থাকেন তিনি।
ওয়ার্ডবয় সোহেল বলেন, সাইফুল স্যার আমাকে স্নেহ করেন বলেই আজ আমি হাসপাতালের কাজে নিয়োজিত হয়েছি। স্যার আমকে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক ভালোবাসেন। তাইতো আমাকে তিনি গাইনী বিভাগের ওটিতে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনি ওসমানীত মেডিকেল হাসপাতালে ব্লাক লিস্টে আছেন জানালে, তার কাজ আছে বলে তিনি চলে যান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খানের মুঠোফোনে কল করলে তার মুঠোফোন বন্ধ দেখায়। এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তীর মুঠোফোন ব্যস্ত দেখায়।
শেয়ার করুন