মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইন অমান্য করে ওভার লোড নিয়ে বেপরোয়া গতিতে উন্মুক্তভাবে বালু বহন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হলেও প্রতিরোধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এসব যানের চাকার আঘাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নির্মিত সড়কটি ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়বে বলে আশংকা সচেতন মহলের। প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। কেবল সড়কের ক্ষতি নয়, অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের এর পাশে চাতলাপুর ঘাট বালুর গদি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাকে করে দিন রাত ওভারলোড বালুবাহী গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক নামছে নদীর তীরে। এসব ট্রাকে করে ১১ থেকে ১৪ টন বালু বহন করা হচ্ছে। আর অনভিজ্ঞ চালকরা বেখেয়াল ভাবেই চালাচ্ছে। সরকারি সম্পদের ক্ষতি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রতিরোধে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক। কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো আইন প্রয়োগ হচ্ছে না।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি গাড়িতে বালুর পরিমাণ উল্লেখ করা কথা থাকলেই নেই টোকেনে বালুর পরিমাণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাম্প ট্রাকের চালক বলেন, আমরা চালক ৮শ ৫০ ফুট বালু নেয়ার কথা তবে আমাদেরকে ওভার লোড করে তারা দিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলোবালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য।
শমশেরনগর এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান জানান, আমার বাড়ি রাস্তার পাশে। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন ১০ চাকার ডাস্পার বালুবাহী ট্রাকসহ ছোট ছোট ডাম্পার ট্রাক দিয়ে মাটি বালু পরিবহন হয়। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। মোটর সাইকেল চালক আলমগীর হোসেন ও নিবাস চন্দ বলেন, খোলা ট্রাকে বালু পরিবহনের ফলে সড়কে চলার সময় ট্রাক থেকে ধুলো বালু চোখে পড়ে। দেখার যেন কেউ নেই।
শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের দোকান-পাঠ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। এছাড়া ওভার লোড বহনকারী গাড়ীর কারণে শমশেরনগর-চাতলাপুর রোডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
ওভার লোড বিষয় জানতে চাইলে, চাতলাপুর বালু ঘাটের প্লাটিনাম বিজনেস কনসোর্টিয়াম এর ম্যানেজার মো. জুয়েল মিয়া বলেন, সারা দেশেই অবৈধ চলছে। আমাদের স্থানে এলে মাপ দেয়, ঘাটে মাপ দেওয়া হয়না। বিক্রি গাড়িতে টোকেন দেওয়া হয় আর সিস্টেমে টোকেন দেওয়া হয় না। গন্তব্য যাওয়ার পর বালু পরিমাপ করা হয়, ঘাটে মাপ দেওয়া হয় না। ইউএনও সাহেব বলার পর থেকে ব্রিজের পাশ থেকে মেশিন সরিয়ে নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার এর সহকারি প্রকৌশলী মো: কায়ছার হামিদ বলেন, সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ ওভার লোড বহন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, শরীফপুর বালুঘাটটি কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও দেখার কথা, তবে আমরা বিষয়টি নজরে রাখব।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খন্দকার বলেন, ব্রিজের পাশ থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করিয়েছি। ওভার লোড বিষয়ে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন