অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি রয়েছে। চুক্তির এই বিষয়টি একেবারে ‘‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’’ পৌঁছেছে বলে উভয়পক্ষের মাঝে মধ্যস্থতাকারী কাতারের সরকারি এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে আজ (মঙ্গলবার) রাতেই অথবা আগামীকাল সকালের মধ্যেই হামাস-ইসরায়েল চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘‘আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি।’’ সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ২৪০ জিম্মিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের সাথে হামাসের মাঝে চুক্তির এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে উপসাগরীয় অঞ্চলের ধনী রাষ্ট্র কাতার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। চুক্তির বিষয়ে আল-আনসারি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি সফল করার কাজে মধ্যস্থতার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।’’
এর আগে, হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, তারা ইসরায়েলের সাথে ‘‘একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।’’
কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি হাশেম আহেলবারা বলেছেন, কাতার সরকারের কাছে চুক্তির বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে হামাস। তাদের এই তৎপরতার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে হামাস-ইসরায়েল।
তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি চুক্তিটি চূড়ান্ত করার জন্য দোহা, তেল আবিব, কায়রো, রাফাহ এবং গাজায় সংশ্লিষ্ট দলগুলো কাজ করছে। অনেকের ধারণা আজ (মঙ্গলবার) রাতে অথবা আগামীকাল ভোরে চুক্তিটি ঘোষণা করা হতে পারে। চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হামাসের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় যারা মুক্তি পাবেন, তাদের কীভাবে ইসরায়েলে পৌঁছানো হবে, সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছেন।
হামাস বলেছে, যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, প্রথমে তার একটি তালিকা প্রকাশ করবে তারা। তবে বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের একই সময়ে মুক্তি চায় হামাস। আলজাজিরার প্রতিনিধি বলেছেন, নির্দিষ্ট এই বিষয়ে উভয়পক্ষ কীভাবে কাজ করবে, তা আমরা এখনও জানতে পারি নাই।
হামাস জোর দিয়ে বলেছে, তারা বন্দীদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে নির্দিষ্ট এক সময়সীমার মধ্যে; যা নিরাপত্তার কারণে পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে চলবে। কারণ সব বন্দীকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। গাজায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রস জিম্মিদের গাজা থেকে ইসরায়েলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। ওই দিন স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলে ঢুকে শত শত ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৪০ জনের বেশি ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে হামাস।
এই হামলার পর গাজায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি এই উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।
শেয়ার করুন