খেলোয়াড়ি জীবনে ব্যক্তিগত ও দলগত অনেক অর্জন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। ব্যালন ডি’অর, ফিফা দ্য বেস্ট, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লিগ শিরোপা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ; কী নেই রোনালদোর দখলে? তবে একটাই বাকি—বিশ্বকাপ শিরোপা; সেটা জেতা হয়নি রোনালদোর।
রোনালদো বিশ্বকাপ জেতেননি। বর্তমানে যে ফর্ম এবং বয়স তাতে আর বিশ্বকাপ খেলা হবে না তার—এটা নিশ্চিতই। এই অপ্রাপ্তি নিয়ে চোখ মুছতে-মুছতে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। জানেন ভালো করেই ফুটবলের এই মহামঞ্চে ফুটবলার হিসেবে আর নামা হবে না তার!
কেবল কি রোনালদো? ফুটবলের আরও অনেক মহাতারকা বিশ্বকাপ না জিতেও খেলোয়াড়ি জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন। তবে ফুটবল তাদের ঠিকই মনে রেখেছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও বুঝি বিশ্বকাপ না জেতা সেই সব মহাতারকার তালিকায় নিজের নাম লিখালেন!
সংক্ষিপ্ত করে তালিকার দিকে একটু চোখ বুলালেই দেখা যাবে কারা আছেন এই তালিকায়— লেভ ইয়াসিন, পাওলো মালদিনি, জর্জ বেস্ট, মিশেল প্লাতিনি, জিকো, সক্রেটিস, ইউসেবিও, আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেঙ্ক পুসকাস, ইয়োহান ক্রুইফ, অলিভার কান, ডেভিড বেকহাম, লুইস ফিগো; ফুটবল সম্পর্কে জানাশোনা থাকলে এই নামগুলো মনে পড়ার কথা। কিংবদন্তি এই ফুটবলাররা খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক কিছু জিতলেও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি।
এই মহাতারকাদের মতো আরও অনেকেই বিশ্বফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জিততে পারেনি। তবে ফুটবল মনে রেখেছে তাদের। তাদের অর্জনগুলো মনে রাখতে বাধ্য করেছে, বলাই বাহুল্য।
কাতার বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি খেলছেন তাদের শেষ বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালে পৌঁছার সুবাদে আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির এখনও সুযোগ থাকলেও মরক্কোর কাছে হেরে বিশ্বকাপ জয়ের আরাধ্য স্বপ্নে ছেদ পড়েছে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালোদোর।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে রোনালদোর পর্তুগাল। আর এতেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন-পথ থেমে গেল রোনালদোর।
শেষ ষোলোর ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ম্যাচের ৫১তম মিনিটে বদলি নামান রোনালদোকে। ম্যাচে কয়েকবার গোলের চেষ্টা করে গেছেন রোনালদো। কিন্তু শেষটা রাঙানো হলো না তার।
রুবেন নেভেসের জায়গায় বদলি হয়ে নামা রোনালদো যখন মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন তখন সতীর্থ পেপে এগিয়ে এসে পরিয়ে দেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড।
শুরু থেকেই বলের জন্যে মরিয়া ছিলেন রোনালদো। বলের সন্ধানে তাকে নেমে যেতে হয়েছে অনেক নিচে। কয়েকবার দেখানোর চেষ্টা করেছেন ঝলক। দুর্দান্ত কিছু পাসও বাড়িয়েছেন। এক গোলে পিছিয়ে পড়া দলকে উদ্ধার করতে ম্যাচের ৯০তম মিনিটে বাঁদিক থেকে একটা শট নিয়েছিলেন, হাত থেকে ছুটে গেলেও দ্রুতই ঝাঁপিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।
রোনালদোর দল ম্যাচ হারে ১-০ গোলে, বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের সেই মুহূর্তে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সিআরসেভেন। খেলা শেষ হওয়ার পর দ্রুত মাঠ ছাড়েন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। টানেলে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখ মুছতে দেখা যায় আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার ও গোল করার রেকর্ডের মালিক ফুটবলারকে।
এবারের বিশ্বকাপে দুর্দান্তভাবে শুরু করেছিলেন রোনালদো। প্রথম ম্যাচে ঘানার বিপক্ষে প্রথম গোলটি আসে তার পা থেকেই। এই গোল করে তিনি বিশ্বকাপে গড়েন এমন এক কীর্তি যা আগে দেখেনি বিশ্বকাপ। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা পাঁচ আসরে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়েন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। এর পরেই কোনো ম্যাচে আর গোল পাননি রোনালদো। প্রথম বিশ্বকাপের মতো তার শেষ বিশ্বকাপও শেষ হয় মাত্র এক গোল করেই।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডের মালিক রোনালদো কান্নায় বিদায় নেওয়ার দিনেও স্পর্শ করেছেন আরেক রেকর্ড। এবারের রেকর্ড আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার, যে রেকর্ডটি এতদিন ছিল কুয়েতের ফরোয়ার্ড বাদের আল-মুতাওয়ার। দুজনই খেলেছেন ১৯৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একটি হ্যাটট্রিকসহ করেছেন ৮ গোল। আর পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে ১৯৬ ম্যাচে খেলে করেছেন রেকর্ড ১১৮টি গোল।
শেয়ার করুন