স্টাফ রিপোর্টার: ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাটের কারণে হুমকির মুখে সিলেটের এক সময়ের খরস্রোতা নদী বাসিয়া। স্থানীয় লোকজন বেড়া দিয়ে ময়লা ফেলে ভরাট করার পর নদীতে দোকান, বসতঘর ও বিপণিবিতান নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এছাড়া নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার-মাসুকবাজার রোডে পোষ্ট অফিস থেকে সিএনজি স্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গায় অবৈধভাবে বাসিয়া নদী দখল করে মার্কেট দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। সকলেই বিগত আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী বলে জানা গেছে। এরমধ্যে বাসিয়া নদীর কামালবাজার অংশের আনন্দবাজার এলাকায় একের পর এক মার্কেট নির্মাণ করছেন যুবলীগ নেতা কামালবাজার ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক। পূর্ব থেকেই নদী ভরাট করে ১০/১২টি দোকান বানিয়ে দেদারছে ব্যবসা করে আসছেন তার পরিবারের সদস্যগণ। সম্প্রতি নতুন করে আরো ৫/৬টি দোকান নির্মাণের কাজ শুরু করছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও যুবলীগ নেতার বাসিয়া নদী দখল থেমে যায়নি। অবৈধ দখলের কারণে কামালবাজার অংশে বাসিয়া নদী ক্রমশ সরু হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরমা নদী থেকে সিলেটের জালালাবাদ থানার মাসুকগঞ্জ বাজার নামক স্থান থেকে বাসিয়া নদীর উৎপত্তি হয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জের স্বাধীনবাজার নামক স্থানে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষ হয়েছে। বাসিয়া তীরে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদীর নাব্যতা শতভাগ থেকে এখন ৯০ ভাগ কমে গেছে। এতে প্রায় ৬০০ ফুট প্রস্থের বাসিয়া এখন একটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘের বাসিয়া নদীর উৎসমুখ ও নিষ্পত্তি মুখ দুটিই ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীটি। এছাড়া নদীটি ভরাট হওয়ার ফলে আশপাশের এলাকায় চাষাবাদে নানা ব্যাঘাত ঘটছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার-মাসুকবাজার রোডের পার্শে¦ বাসিয়া নদী দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট দোকান নির্মাণ করে অনেকেই ব্যবসা করছেন। এরমধ্যে ২০০৯ সালে কামালবাজার-মাসুকবাজার রোডের পশ্চিমে আনন্দবাজার এলাকায় হাশিমী উদ্যানের সামনে দোকান নির্মাণ শুরু করেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কামালবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হকের চাচা এম এ হাশিম। এরপর থেকে এই এলাকায় পতিত আওয়ামী সরকারের সমর্থনপুষ্ট তাদের পরিবারের নেতৃত্বে চলছে বাসিয়া নদী দখল করে দোকান নির্মাণ। ইতোমধ্যে শুধু তাদের দখলেই নির্মিত হয়েছে প্রায় ২০টি দোকান। ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কামালবাজার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন যুবলীগ নেতা একরামুল হক। এরপর গত বছর বাসিয়া নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় সরকারী বরাদ্দে নদীর পাড়ে বালুর বস্তা দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে যুবলীগ নেতা একরামুল হক চেয়ারম্যান তার দোকানের পাশেই অধিকাংশ বালুর বস্তা ফেলেছেন এবং বর্তমানে সেখানেই দোকান নির্মাণ করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে কামালবাজার ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কামালবাজার-মাসুকবাজার রোডে তিনি একা নয়, অনেকেই বাসিয়া নদীর পাড়ে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। রাস্তার পুর্ব পাশে^ তাদের লিজ নেয়া জায়গায় মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই হিসেবে রাস্তার পশ্চিম পাশে তারা দোকান নির্মাণ করেছেন। বিগত সময়ে একাধিকবার অবৈধ উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। তাই দোকানগুলো রয়ে গেছে। তবে ভবিষ্যতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে তার দোকানও উচ্ছেদ হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা নদীর বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে মূলত জেলা প্রশাসন। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে ভালো হয়।
এ ব্যাপারে বিশ^নাথ থানার ইউএনও সুনন্দা রায় বলেন, অবৈধ দখলদারদের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা সবসময় অব্যাহত রয়েছে। বাসিয়া নদীর মুল অংশ বিশ^নাথে থাকলেও ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় অবস্থিত। তাই দুটি উপজেলার সমন্বয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়। বাসিয়া নদী দখল নিয়ে একাধিক মামলা ও রিট রয়েছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন