সিলেটের জকিগঞ্জে আল্লামা আবদুল লতিফ ফুলতলি (রাহ.)-এর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল ঈসালে সাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে তাঁর বাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে এ মাহফিল শুরু হয়। চলবে সোমবার ভোর পর্যন্ত।
মাহফিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় আল্লামা ফুলতরি রাহ.-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাহফিল। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে মাহফিল স্থলে। জোহরের পর কানায় কানায় পূর্ণ হয় মাহফিলস্থলসহ আশপাশ এলাকা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্যর পাশাপাশি নিজস্ব সেচ্ছাসেবক টিম ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
মাহফিলে খতমে কুরআন, খতমে বুখারি, খতমে খাজেগান, খতমে দালাইলুল খাইরাতের পাশাপাশি স্মৃতিচারণমূলক ও জীবনঘনিষ্ট আলোচনায় অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত হয় পুরো দিন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো বালাই হাওর। মাজার প্রাঙ্গনে তেলাওয়াত, জিকির আযকার ও জিয়ারতে ছিলো ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল। সোমবার ফজরের নামাজের পর আখেরী মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে মাহফিলের কার্যক্রম শেষ হবে।
মাহফিলে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ও মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলীর পরিচালনায় মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে নসিহত পেশ করেন আল্লামা ফুলতলি রাহ.-এর বড় ছেলে মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী।
আলোচনাকালে তিনি বলেন- আল্লামা ফুলতলি রাহ. একদিকে কুরআন-হাদীস শিক্ষা দিয়েছেন, অন্যদিকে নির্জনে আল্লাহর যিকরে সময় কাটিয়েছেন। যারা সিলসিলার সাথে সম্পৃক্ত, আপন মুরশিদের নির্দেশনায় মাঝে মধ্যে নির্জনবাসের চেষ্টা করবেন। হিযবুল বাহার, দালাইলুল খাইরাত পড়বেন। সর্বোপরি সর্বাবস্থায় শরীয়তের অনুসরণ করবেন। যিকরের ক্ষেত্রে তরীকার অনুসরণ করবেন। সিলসিলার নামে ভন্ডামি করলে সিলসিলার ফয়েয থেকে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফুলতলি রাহ. ইলমে কিরাতের সনদ দিয়েছেন, হাদীস শরীফের সনদ দিয়েছেন। এগুলোর মাধ্যমে মদীনার সাথে তাআল্লুক সৃষ্টি হয়েছে। যথাসম্ভব এসব সনদের হক আদায় করবেন।
তিনি উপস্থিত সকলকে নসিহত করে বলেন, মা-বাবার খিদমত করুন। তাদের দুআ নিন। তারা দুনিয়ায় না থাকলে তাদের জন্য দুআ করুন। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থেকে ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি করুন। বিপদ-আপদে রাসূলুল্লাহ সা. এর ওসীলা নিয়ে আমরা দুআ করতে পারি। আহলে কিতাব কাফির-মুশরিকদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানী তারা রাসূল সা. এর ওসীলা নিয়ে দুআ করার পরামর্শ দিতেন। তারা দুআ করতেন হে আল্লাহ, আপনি যে নবী প্রেরণের ওয়াদা করেছেন সে নবীর ওসীলা নিয়ে দুআ করছি, আপনি আমাদের বিজয় দান করুন। তখন বিলম্ব ছাড়াই বিজয় আসতো। হযরত সাফীনা রা. নবীজির সাহাবী। তিনি নবীজির একটি চিঠি নিয়ে হযরত মুআয বিন জাবাল রা. এর কাছে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাঘ তাকে আক্রমন করতে উদ্যত হলো। তিনি বাঘের উদ্দেশ্যে বললেন, সাবধান! আমি সাফীনায়ে রাসূল। আল্লাহর রাসূল আমাকে সাফীনা লকব দিয়েছেন। আমার কাছে আল্লাহর রাসূল এর একটি চিঠি রয়েছে। এ কথা শুনে বাঘ তাকে সম্মান জানালো। আমাদের হাতেও একটি চিঠি আছে। আর তা হলো, হুব্বে রাসূল। আমরা যতই অধম হই না কেন অন্তরে রাসূলুল্লাহ সা. এর মহব্বতের আসন রয়েছে। তিনি বলেন, যারা নেতৃত্বের আসনে বসেন, জনমনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে। কিছু মানুষ বন্ধু সেজে আবার তাদের সুনাম নষ্ট করতে চায়। দেশের কর্তৃত্বে যারা আছেন আল্লাহ যেন তাদের ধোঁকাবাজ থেকে রক্ষা করেন। ডারউইনের হাস্যকর তথ্য সম্পর্কে ভালোভাবেই আমার অধ্যয়ন করা আছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি থিওরি। এসব কুফরী মতবাদ সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। আমরা বানরের সন্তান নয়, আমরা মানুষের সন্তান।
মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুসলিম হ্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান সায়্যিদ লখতে হাসানাইন, পাকিস্তানের প্রখ্যাত বুযুর্গ সাহিবজাদা গোলাম জিলানী, ভারতের উজানডিহির পীর ছাহেব হযরত মাওলানা সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ফার্সি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, নেছারাবাদের পীর ছাহেব মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা’র অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, ভান্ডারিয়া কামিল মাদরাসা, রাজবাড়ী এর অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল এরশাদ মো. সিরাজুম মুনির, ঢাকা দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আ. খ. ম আবু বকর সিদ্দীক।
মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেট এর উপপরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন মাওলানা আবূ আব্দিল্লাহ মো. আইনুল হুদা, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মোশাহিদ আহমদ কামালী, মহাখালী কামিল মাদরাসা মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুহিবুর রহমান, রাখালগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শেহাব উদ্দিন আলীপুরী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ, মুফতি মাওলানা শাহ আলম প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন আনজুমানে আল ইসলাহর সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, মাওলানা ফরিদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজির উদ্দিন পাশা, অর্থ সম্পাদক মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, কদমচালের পীর ছাহেব মাওলানা আবুল কাশেম নকশবন্দী, ভাঙ্গা ইকামতে দ্বীন কামিল মাদরাসা, ফরিদপুর এর অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইউসুফ মৃধা, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের সাবেক খতীব মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী, সোবহানীঘাট হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, ফেনী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী এর অধ্যক্ষ মাওলানা হুসাইন আহমদ ভূইয়া, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, বিশ^নাথ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুমান আহমদ, ফকিরবাজার ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, বুড়িচং, কুমিল্লা এর অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল বাশার, সম্ভবপুর নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসা, ভৈরব এর অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতী মাসুদ আলম, রাখালগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান তালুকদার, ফরিদপুর জেলা পুলিশের এএসপি নোমান আহমদ, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আলমগীর হোসেন, হাফিয মাওলানা নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা বেলাল আহমদ, মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাবেক সহ সভাপতি মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা হুমায়ূনুর রহমান লেখন, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম মহসিন, স্পেন আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা আসাদুজ্জামান রাজ্জাক, মাওলানা আব্দুস সোবহান জিহাদী, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সহ-সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মিল আলী শরীফ, মুক্তাগাছা আববাসীয়া কামিল মাদরাসা, ময়মনসিংহ এর মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি মো. রূহুল আমীন, ডাক্তার মো. আব্দুস সামাদ, ইকামতে দ্বীন মডেল কামিল মাদরাসা, ফরিদপুর এর সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন, মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা মো. মাইন উদ্দিন সরদার, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা উসমান গণি, লতিফিয়া দারুল কিরাত সমিতি, উত্তর পূর্বাঞ্চল, আসাম’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার উদ্দিন, মাওলানা কাজী আলাউদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ, জকিগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সবুর প্রমুখ।
শেয়ার করুন