কুলাউড়ায় চেয়ারম্যানরা লাপাত্তা, সেবাবঞ্চিত ইউনিয়নবাসী

মৌলভীবাজার

চেয়ারম্যান নেই। তাঁর খোঁজও মিলছে না। তালা ঝুলছে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। এমন দৃশ্য দেখা গেল মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই ইউপি’র চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন না। এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী। চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অসদাচরণের দায়ে তাঁর অপসারণ দাবিতে গণস্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দেন তাঁরা। এরপর ২০ আগস্ট চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে বুধবার ইউপি অফিস ঘেরাও করে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

সরেজমিনে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স কার্যালয়ে নেই। তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ। কার্যালয়ে অফিস করছেন সচিব। চেয়ারম্যান না থাকায় তাঁর কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে সেবাপ্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাগরিক সনদ নিতে আসেন ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুল মিয়া, মো. এরশাদ আলী, সুরমান আহমদ, মোশাহিদ আলী, ইয়াছমিন আক্তার সুমাইয়া, জাবেদ মিয়া, সাহেনা আক্তার বলেন, নিজের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগের লেবাসধারী চেয়ারম্যান কার্যালয়ে না এসে গাঢাকা দিয়েছেন। সনদে স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনে খোঁজ করে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স এক দিনও অফিস করেননি। তাঁর কক্ষে তালা মেরেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তিনি কেন কার্যালয়ে আসছেন না তা জানি না। সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন নাগরিকের আবেদন আমি জমা রাখছি। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি।’

ওই ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আমি নির্দেশনা এখনো পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব।’

এ ব্যাপারে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।

শুধু হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সই নন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ৫ আগস্টের পর থেকে ইউপি কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এ তালিকায় রয়েছেন কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মমদুদ হোসেন, কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান, ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম ও কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ।
তাঁদের অনেকেই লাপাত্তা। খোঁজ মিলছে না কোথাও।এতে নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী।

এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে (২৪ আগস্ট) উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের কুদ্দুস মিয়া ওরফে কালা মিয়ার ছেলে পারভেজ মিয়া বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা (নং-১২) দায়ের করেন। ওই মামলায় উপজেলার ৬জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮৩জন নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বাদী পারভেজ মিয়া এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৮ জুলাই সকাল ১১টার পর পৌর শহরের মিলিপ্লাজার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে স্লোগান দিলে ওই সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীসহ তাঁর ওপর হামলা করে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন, সেসব ইউনিয়নে তাঁদের পরিবর্তে প্যানেল চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *