কুলাউড়ায় ৩২ কোটি টাকার সেতু, দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক

মৌলভীবাজার

মনু নদের ওপর বিশাল এক সেতু। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু আজও সেতুর দুই পাশে নির্মাণ করা হয়নি সংযোগ সড়ক। এতে স্থানীয় লোকজন সেতুর ওপর মই বেয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সেতুটি মৌলভীবাজার উপজেলার কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়কের কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। এ কারণে স্থানীয় লোকজন ওই সেতু দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, সওজ অধিদপ্তর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠাতে দেরি করেছে। এখন বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত এই কাজ হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সওজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পূর্ব পাশে একটি ও পশ্চিম পাশে আরেকটি খেয়াঘাট ছিল। পশ্চিম পারে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার লোকজন খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।

একপর্যায়ে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হয় রাজাপুর সেতু। সেতুর দুই পাশে কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়ক। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়।

যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুর দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ এখনো পড়ে আছে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নবনির্মিত সেতুটি বেশ উঁচু। এটির পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট এবং পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু বাঁশের তৈরি মই স্থাপন করা হয়েছে। মইয়ের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে রেলিং দেওয়া হয়েছে। লোকজন মই বেয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন। দুই পাশের মই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

সওজের কুলাউড়া কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার মুঠোফোনে বলেন, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কে ২০টি কালভার্টের মধ্যে ৮টি ইতিমধ্যে নির্মাণ হয়ে গেছে। সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

মৌলভীবাজার জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কমিটির সভা হবে। ওই সভায় অধিগ্রহণের বিষয়টি অনুমোদন হলে দ্রুত পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *