কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট ঝড়, ৫ মিনিটেই বহিষ্কার ৯, তীব্র সমালোচনা

জাতীয় শিক্ষা

কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল রহমান তাদের কারো কোনো অনুরোধ না শুনে এক তরফাভাবে পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে ৯ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান।

 

৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জনের খাতায় রোল নম্বর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া তখনো কিছুই লেখা হয়নি, তারপরও বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি দুই পরীক্ষার্থীর একজন দুটি উত্তর এবং অপরজন তিনটি উত্তরের বৃত্ত ভরাট করেছে কেবল, এমন সময়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়।

এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ৯ জনকে বহিষ্কার করার ঘটনায় এলাকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, কেন্দ্রে যেন হঠাৎ একটা ঝড় বয়ে গেল! কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল তাদের কারো কোনো অনুরোধ না শুনে এক তরফাভাবে পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান। এ সময় তিনি কক্ষ পরিদর্শন শুরু করেন। বিভিন্ন অভিযোগে একের পর এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা শুরু করেন তিনি।

আমার ছেলে নকল করেনি। কোনো বইও পাননি ম্যাজিস্ট্রেট। কোন‌ অপরাধে আমার ছেলেকে বহিষ্কার করলেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। খাতায় কোনো কিছু লেখার আগেই বহিষ্কার করে দেন তিনি। এটা কেমন বিচার?’

বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থী কল্যাণ কলস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী মোসাম্মত ইমা আক্তার বলেন, আমি রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখছিলাম এমন সময় ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের রুমে এসেছেন দেখে ভয় পেয়ে যাই। আমার হাত থেকে কলমটা নিচে পড়ে গিয়েছিল। আমি কলম তুলতে পেছনে যখন তাকাই, তখন আমাদের ক্লাসে যে স্যার ছিলেন তাকে ম্যাজিস্ট্রেট স্যার বলেন- ‘পেপার নিয়ে নাও।’ এরপর আমার পেপার নিয়ে নেন স্যার। তারপর আমাদের ম্যাডামের রুমে নিয়ে আসেন।

ইমা বলেন, ‘এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে এসেছি, আমাদের জীবনটাই শেষ করে দিয়েছেন ম্যাইজস্ট্রেট স্যার।’

আমি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু স্যার আমার কথা রাখলেন না। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বহিষ্কারাদেশ লিখেছেন।

বহিষ্কৃত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে নকল করেনি। কোনো বইও পাননি ম্যাজিস্ট্রেট। কোন‌ অপরাধে আমার ছেলেকে বহিষ্কার করলেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। খাতায় কোনো কিছু লেখার আগেই বহিষ্কার করে দেন তিনি। এটা কেমন বিচার?’

এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের হল সুপার ও খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান মনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন এমসিকিউ উত্তরের উত্তরপত্রের দুটি ঘর পূরণ করে এবং অপরজন তিনটি উত্তর ভরাট করে। বাকি ৭ জন শুধু রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘর পূরণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু স্যার আমার কথা রাখলেন না। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বহিষ্কারাদেশ লিখেছেন।’

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান বলেন, ‘বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা দেখাদেখি ও প্রশ্ন এক্সচেঞ্জ করেছিল। এজন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’

পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় তারা কতটুকুই বা লিখতে পেরেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের খাতায় অনেক কিছুই লেখা আছে।’

এ প্রসঙ্গে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তিনি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *