কেমন হলো এবারের ব্রিফকেসবিহীন বাজেট?

জাতীয়

ব্রিফকেস ছাড়া যেন বাজেট কল্পনাও করা যেত না আগের বছরগুলোতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে আসতেন। তবে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

সংসদ না থাকায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে বিটিভির ধারণ করা বাজেট বক্তব্যে। সোমবার বিকাল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট পেশ করেন।

যেহেতু এবারের বাজেট প্রস্তাবনা আগে ধারণ করা এবং জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি, এ কারণে এবারের বাজেটে ব্রিফকেসের মতো এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার কমল। এ বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।

সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেন। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ৪ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এক লাখ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া অন্য খাত থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। পাশাপাশি ৩৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে মূলধন ব্যয় বাবদ।

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপি বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি, বিদেশি ঋণের কঠোর শর্ত আর রাজস্ব ঘাটতির বাস্তবতায় বাজেট প্রস্তাবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি, যা বহু বছরের মধ্যে কম। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।

নতুন অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবার ব্যাংক ঋণ প্রায় ২৪ শতাংশ কমতে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *