
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রশ্ন তুলেছেন সিলেট-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এই ইস্যুতে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকার বড় অংকের অর্থ অনুমোদন দিলেও এর কোন সুফল পাওয়া যায়নি বলেও মনে করেন মুক্তাদির।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটটুডের নির্বাচনবিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘রোড টু ইলেকশন’-এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এমন মন্তব্য করেন মুক্তাদির।
খন্দকার মুক্তাদির বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫/১৬ বছরে সিলেটে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। নগরের জলাবদ্ধতার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
এই সময়কালের প্রায় ১০ বছর বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। খন্দকার মুক্তাদিরকে এই তথ্য স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, কে মেয়র ছিলেন, ছিলেন না সেটা বড় কথা নয়, আওয়ামী সরকারের ১৫/১৬ বছরে সমন্বিত কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কোন খাল উদ্ধার হয়েছে জানি না। আপনারা যদি জানেন, আপনাদের কাছ থেকে জানতে পারলে উপকৃত হবো। কোন খালই উদ্ধারই হয়নি।
মুক্তাদির বলেন, এতোগুলি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে একটা বড় অংকের বরাদ্দ দিলো সরকার, তার অংশ বিশেষ হয়তো খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আগের বন্ধ হয় যাওয়া প্রাকৃতিক খালের কোনটা উদ্ধার হয়েছে? এটা তো জানা দরকার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নগরের জলাবদ্ধতার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ড্রেনেজ সমস্যা আছে। এমনিতেই পানি জমে যায়। খাওয়ার পানির অভাব, এমনকি ব্যবহারের পানিরও অভাব রয়েছে।
নগরের রাস্তাঘাটের এখনকার অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তা ভাঙা। বিশেষত বর্ধিত এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
নির্বাচিত হলে প্রথমেই জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেবেন জানিয়ে সিলেট-১ আসনের এই এমপি প্রার্থী বলেন, সুরমা নদীর সাথে সংযু্ক্ত খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে নতুন করে খাল খনন করতে হবে।
আওয়ামী সরকারের গত প্রায় ১৬ বছরে প্রথম সাড়ে ৪ বছর বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, পরের ১০ বছর আরিফুল হক চৌধুরী ও সবশেষ বছরখানেক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১১টি ছড়া (প্রাকৃতিক খাল) প্রবহমান। এসব ছড়ার ১৬টি শাখা ছড়াও আছে। এসব ছড়া-খাল সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়া-খালগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এর বাইরে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার। নালা-নর্দমায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার পাকা ড্রেন আছে।
সিসিকের প্রকৌশল শাখা জানায়, এসব খাল উদ্ধারসহ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে গত ১৬/১৭ বছরে পায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৯ সালে ছড়া-খাল খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১২ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আরও ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সবমিলিয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সাথে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়।
তবে বিপুল অর্থ ব্যয়ে এসব প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। এতো টাকা খরচ করলেও নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে অর্থের অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে
শেয়ার করুন


