নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বর্তমানে একমাত্র আমদানি ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির বাকি সব সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিটেন্স, চলতি হিসাবের ভারসাম্য, রাজস্ব আয়ের অবস্থা, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য- প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। তাই নাগরিক ঐক্য বলতে চায়, খাদে পড়ে না গেলেও একেবারে খাদের কিনারে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
শনিবার (২৩ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বর্তমান সংকট, দায় ও সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি সব কথা বলেন। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বি রাশে উল্লাহ, সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতা শওকত মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, সহসম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমানসহ প্রমুখ।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হচ্ছে এই সংকটের প্রধান কারণ লুটপাট এবং টাকা পাচার সরকার বন্ধ করবে না। এই দেশে যারা লুটপাট করেন এবং এই দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করেন তারাই সরকার কিংবা সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি অর্থাৎ অলিগার্ক। এসব অকল্পনীয় শক্তিশালী মানুষকে টাকা পাচার করা থেকে বিরত করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই সরকারের আছে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। ওসব অলিগার্করা সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর সব দেশের অলিগার্কদের মত এদের প্রাপ্ত অর্থের হিস্যা যায় ক্ষমতার অনেক ওপর পর্যন্ত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের পক্ষে এই সংকটের সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি।
মূল প্রবন্ধে নাগরিক ঐক্যের সহসম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, এদেশের কিছু অর্থনীতিবিদ তাদের বক্তব্যে বর্তমান সঙ্কটকে সরকারের পলিসির ভুল হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। এদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে যত ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো সব সরকার ঠাণ্ডা মাথায়, পরিণতি জেনে-বুঝে নিয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছে লুটপাটের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। আবারো বলছি, এগুলা কোনোটাই পলিসির ভুল নয়। আলোচিত বিষয়গুলোর সাথে যদি দেশের আর্থিক খাতকে যুক্ত করি তাহলে সরকারের পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হবে। সরকারের অলিগার্কদের লুটপাটের সুযোগ দেয়ার জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে রীতিমত ব্যাংক মালিকদের আজ্ঞাবহ বানিয়ে ছেড়েছে। ক্ষমতাশালীদের আরও বেশি সংখ্যায় এবং বেশি সময়ের জন্য ব্যাংকের মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদে থাকা নিশ্চিত করার জন্য একের পর এক আইন এবং বিধি বদলে ফেলা হয়েছে। শুধু সেটাই নয়, সামান্য টাকা পরিশোধ করে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিল করে নতুন ঋণ পাবার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে।
ডা. জাহেদ বলেন, সবচেয়ে বড় কথা দেশের রিজার্ভের যে পরিস্থিতি তাতে খুব দ্রুতই ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের বিরাট পতন হবে। ফলে মূল্যস্ফীতি যাবে ভয়াবহ পর্যায়ে। টিকে থাকতে সাধারণ মানুষের এখনই নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, তাই সামনের পরিস্থিতি অকল্পনীয় রকম কঠিন হবে সাধারণ মানুষের জন্য।