গড় আয়ু বেড়ে ৭৪.২ বছর

জাতীয়

দেশের মানুষের গড় আয়ু দশমিক ১ বছর বেড়েছে। ২০২২ সালের চূড়ান্ত হিসাবে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৪ বছর। যা ২০২১ সালে ছিল ৭২.৩ বছর।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে এসব তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিবিএস জানায়, ২০২২ সালে দেশের পুরুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৮ বছর। যা ২০২১ সালে ছিল ৭০.৬ বছর। এ ছাড়া মহিলাদের গড় আয়ুও কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সালে মহিলাদের গড় আয়ু ছিল ৭৪.১ বছর। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.২ বছর।

দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০২২ সালের হিসাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৪ বছর। এর মধ্যে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১ দশমিক ৮ আর নারীর ৭৪ দশমিক ২ বছর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু আরও বেশি ছিল। ওই বছর গড় আয়ু দাঁড়িয়েছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। এর আগে ২০১১ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। ২০১৮ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (চলতি দায়িত্ব) মহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু।

বাংলাদেশের গড় আয়ুর বিস্তারিত
বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, প্রতিটি দশকেই এ হার বেড়েছে। এর মধ্যে কেবল ষাটের দশকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল নাগাদ যে বৃদ্ধি ঘটেছে, দশক শেষে মানে ১৯৭০ এ এসে তার কিছুটা অবনতি হয়েছে। এরপর পরবর্তী প্রায় সবকটি দশকে, একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া, পাঁচ বছর করে বেড়েছে এখানকার মানুষের গড় আয়ু। এর মধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে গড় আয়ু বেড়েছে সাত বছর। যদিও ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত গড় আয়ু বৃদ্ধি কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। এ সময়ে গড় আয়ু মাত্র দুই শতাংশ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রতি পাঁচ বছর ব্যবধানের হিসেবে দেখা যায়, ১৯৬০ থেকে ‘৬৫ সালে গড় আয়ু ৪৬ থেকে ৪৯ বছর হয়েছে। কিন্তু তার পরের পাঁচ বছরেই তা আবার খানিকটা কমে ৪৮ বছরে নেমে এসেছে।

১৯৭০ থেকে ১৯৮০ এই দশকে গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ে গড় আয়ু এক বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় গড় আয়ু ছিল ৪৯ বছর। এই সময়ে গড় আয়ু বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক হিসেবে ছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ওই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ প্রাণ হারান। এরপর ছিল দুর্ভিক্ষ। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮০ সালে দেখা গেছে আয়ু নিরুদ্বিগ্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৯ বছর থেকে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ৫৩ বছরে।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০, এই দশকে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এই দশকে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ বছর, অর্থাৎ ৫৩ বছর থেকে সেটি ৫৮ বছর হয়েছে। এই দশকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যনীতি প্রণীত হয়, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়। বেসরকারি খাতে বিভাগীয় এবং জেলা শহরগুলোতে গড়ে ওঠে ক্লিনিক এবং পরীক্ষাগার, কমে আসে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার।

১৯৯০ থেকে ২০০০, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত প্রায় ছয় দশকের মধ্যে এই দশকেই মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই দশকে গড় আয়ু বেড়েছে সাত বছর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর মূল কারণ আগের দশকের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিষয়ক ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রভাব দেখা গেছে এ দশকেও। সেই সঙ্গে এই দশকেই দেশের বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উন্নয়ন শুরু হয়, একই সঙ্গে কৃষিখাতেও একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়।

২০০০ থেকে ২০১০ বিশ্বব্যাংক বলছে, এই দশকেও গড় আয়ু বেড়েছে পাঁচ বছর, ৬৫ বছর থেকে ৭০ বছরে এসে দাঁড়ায়।

২০১০-২০১৮; এ সময়কালে গড় আয়ু বৃদ্ধি কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। এ সময়ে গড় আয়ু দুই শতাংশ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *