বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেট বিএনপিতে এখন সাজ সাজ রব। বড় জমায়েতের লক্ষ্যে চলছে এখন জোর প্রস্তুতি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় কাজ করছেন স্থানীয় নেতারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে এবার।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের সবক’টি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ইতিমধ্যে গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে এবং ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে দলটি। আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরের পর ২০ নভেম্বর সিলেটে হবে গণসমাবেশ। এ ছাড়া ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে বিএনপির গণসমাবেশ।
বিএনপি নেতারা জানান, সিলেটের গণসমাবেশ হবে নগরীর চৌহাট্টা এলাকাস্থ আলিয়া মাদরাসা মাঠে। সমাবেশের অনুমতির জন্য ইতিমধ্যেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া শিগগিরই পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেবে দলটি।
সিলেটের এই গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি সভা করছে বিএনপি। গত ১৮ অক্টোবর সিলেট বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জেলা ও মহানগর যুবদলের সকল ইউনিটের নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন। ২০ অক্টোবর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের সকল ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে হয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা। একই দিন জেলা ও মহানগর মহিলা দলের সব ইউনিটের সাথে সভায় বসেন বিএনপি নেতারা।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ১৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট বিভাগের চারটি জেলার বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল, মহিলা দলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন। নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আক্তার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী ও এম নাসের রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ সফল ও ব্যাপক জমায়েত নিশ্চিত করতে ‘সর্বাত্মকভাবে’ মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেন। সিলেট বিভাগের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড, পাড়া, উপজেলা ও পৌরসভায় ব্যাপক প্রচারণার সিদ্ধান্তও হয়। ওয়ার্ড, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে প্রচারণায় দিকনির্দেশনা দিতে জেলার নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে প্রচারণার নজর রাখবেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির প্রত্যেকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে পৃথকভাবে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী সিলেটভিউকে বলেন, ‘বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে সিলেট বিএনপিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। একের পর এক প্রস্তুতি সভা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন। পুরো বিভাগের বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল দায়িত্বশীলদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠন করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুসারে মাঠে জোর তৎপরতা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভাগের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড, পাড়া, উপজেলা, পৌরসভায় প্রচারণা চলবে। এই গণসমাবেশ মূলত মানুষের জন্য, মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য। তাই সবার আগে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছুটছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।’
এদিকে, সমাবেশ সুষ্ঠু ও সফল করতে দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন কাজ ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হবে বিভিন্ন উপকমিটি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘আলিয়া মাদরাসা মাঠে গণসমাবেশ করতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হবে। তাদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনিদের্শনা দিচ্ছেন, আমরা প্রচারণাও শুরু করেছি। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে একটি সফল সমাবেশ হবে ইন শা আল্লাহ!’
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী সিলেটভিউকে বলেন, ‘গণসমাবেশের আগের দিন থেকেই নেতা-কর্মীদের ঢল নামবে সিলেটে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে ইন শা আল্লাহ!’
শেয়ার করুন