শনিবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমন অভিযোগ করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
ডিমের বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে বহুজাতিক কোম্পানি এবং রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
একইসঙ্গে, গত ২০ দিনে অযৌক্তিকভাবে ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।
তিনি বলেন, “ডিমের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কারণ ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণে প্রান্তিক খামারিদেরকে না রেখে, কর্পোরেটদের পরামর্শে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, আর এর সুযোগ নিয়েছে তারা। কর্পোরেট গ্রুপগুলো এই সুযোগ ব্যবহার করে গত ২০ দিনে ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিটি কর্পোরেট কোম্পানি তাদের ডিম উৎপাদক পর্যায়ে ১১ দশমিক ১ টাকা বিক্রি করার কথা স্বীকার করলেও তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে এখন খুচরা বাজারে এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়। প্রতিটি দিমে ২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এভাবে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমে ৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাভ নেওয়া হয়েছে। আর গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। অথচ ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫৬ টাকায়। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে ১২০ কোটি টাকা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করছে।
এসব সিন্ডিকেটের পেছনে সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানির হাত রয়েছে বলেও সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেছেন। একইসঙ্গে, সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো তদারকির মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভেঙে সবার জন্য উপযোগী দাম নির্ধারণের দাবিও জানানো হয়।
সুমন হাওলাদার আরও বলেন, “ডিম আর মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে ডিম-মুরগির উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে শিগগিরই বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে ডিমের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের ভূমিকার ব্যাপারে বলা হয়, তারা প্রথমে খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। পরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ডিম পাঠানো হয়। এরপর সকালে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ভোর থেকে দাম নির্ধারণ করে সব জায়গায় মোবাইল এসএমএস ও ফেসবুকের মাধ্যমে দাম ছাড়িয়ে দেয়। এরপর সারাদেশেই এই দাম বাস্তবায়ন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কর্পোরেট কোম্পানি। তারা এতই শক্তিশালী যে, সরকার ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ না করে উল্টো উৎপাদকের ওপর দাম চাপিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে কর্পোরেট গ্রুপগুলো সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ পাচ্ছে।
অন্যদিকে, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের সমিতির দৈনিক ডিম সরবরাহের সক্ষমতা হলো ১৫ লাখ, সেখানে দেশের দৈনিক চাহিদা ৪ কোটি পিস।”
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে বন্যার কারণে ডিমের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।”
এছাড়া, চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয়ে পর্যপ্ত সঠিক তথ্য না থাকাও বাজার অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেয়ার করুন