গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মেসে চুরি ও হয়রানি, আটক ৩

জাতীয়

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) সংলগ্ন ছাত্রী মেসে (বিশ্বাস বাড়ি) অজ্ঞাত পুরুষ প্রবেশ ও গভীর রাতে ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মেস মালিকসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়ের করলে যশোর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানা যায়, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে এগারোটার দিকে যবিপ্রবি সংলগ্ন আমবটতলার বিশ্বাস বাড়ি ছাত্রী মেসে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া ও কেয়ারটেকার মানিক মন্ডলের সহযোগিতায় সজীব মোল্যা নামে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে বাড়ির ছাদে অবস্থান নেয়। রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে সজীব মোল্যা মেসের ২য় তলার ছাত্রীদের একটি রুমের দরজায় পানি চেয়ে ঠক ঠক শব্দ করে। কিন্তু ওই রুমের ছাত্রীরা পুরুষ কণ্ঠ শুনে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্ত সজীব দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করার হুমকি ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।

এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের জানালে তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীরা এসে সজীব মোল্যা, মানিক মন্ডল ও বাড়ির মালিক রবিউল ইসলামকে আটক করে মারধর করে তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে যবিপ্রবি প্রক্টর বাদী হয়ে মামলা করে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্বাস বাড়ি মেসের মালিক রবিউল ইসলামের নির্দেশনায় বাড়ির কেয়ারটেকার মানিক মন্ডলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নড়াইলের বাসিন্দা সজীব মোল্যা মেসের ছাদে যায় ও পরবর্তীতে রাত দেড়টায় ছাত্রীদের রুমে কড়া নাড়ে। কিন্তু দরজা না খুললে হুমকি-ধমকি দেয় ও খালি গায়ে মেসের মধ্যে সজীব ঘুরতে থাকে।

মামলার এজাহার বলা হয়, মৃত লুৎফুর বিশ্বাসের ছেলে রবিউল ইসলাম, আফজাল মোল্যার ছেলে মো. সজিব মোল্যা ও মো. নুর ইসলামের ছেলে মানিক মণ্ডল এই চুরির সঙ্গে যুক্ত, তাদের স্বভাব-চরিত্র ভালো না এবং রবিউল ইসলামের একাধিক স্ত্রী রহিয়াছে। যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা রবিউল ইসলাম বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে সে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে উত্যক্ত, আজেবাজে কথাবার্তাসহ যৌন হেনস্তা করে আসছে।

এছাড়া তাদের বাড়ির পানির লাইন ও বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে রবিউল ইসলাম তাদের মারপিট করে আহত করে। বাধ্য হয়ে তারা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে আসামিরা কিছুদিন ভালো ছিল।

রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক রাত দেড়টায় ঘুমানোর পর প্রায় দুইটার দিকে গোপনে প্রবেশ করে চুরি করার সময় শিক্ষার্থীরা টের পেয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তিন জনকে আটক করে। পরে মো. সজিব মোল্যা ও মানিক মন্ডল জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে যে তারা রবিউল ইসলামের নির্দেশে চুরির জন্য প্রবেশ করেছে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী জাইমা (ছদ্মনাম) বলেন, রোববার রাতে বিভিন্ন সময় আমাদের মেসের আশপাশে তারা দুই জন ঘোরাঘুরি করছিল। রাত এগারোটার দিকে আমি ছাদে গেলে তখন দেখি তারা আমাদের মেয়েদের মেসের ছাদে বসে আছে। আমি তখন কিছু না বলে রুমে চলে যাই। রাত তিনটার দিকে আমাদের রুমের দরজায় দু’জন ধাক্কা দিতে থাকে। একপর্যায়ে অনেক খারাপ ভাষায় আমাদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করতে  থাকে ও হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। পরে আমরা আশপাশের লোকজনদের ডাক দিলে ওনাদের আটক করে পুলিশে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব মেসে যেন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং হলগুলো এ মাসের মধ্যে খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ও  প্রভোস্টের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ভোর বেলায় যাই। সেখানে শিক্ষার্থীরা আসামিদের পুলিশে দিতে বলে, যা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হওয়ায় আমি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার করি। শিক্ষার্থীরা যেন ন্যায় বিচার পায় তার জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় ন্যায় বিচার পাবে বলে আশা করি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রশাসন টহল দিবে। নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যেদরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাককে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *