পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে তিনশ কোটি ডলারে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশটি মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে।
বৃহস্পতিবার দেশটির মুদ্রা রুপির মানও ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর আরেকটি রেকর্ড গড়েছে।
বৃহস্পতিবার রুপির দর আরও কমে এক ডলারের বিপরীতে ২৭১ দশমিক ৩৬ রুপিতে পৌঁছেছে। খোলাবাজারে এক ডলারে মিলছে ২৭৫ দশমিক ৫০ রুপি, আগেরদিনও যা ছিল ২৭৫।
পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের (এসবিপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের পর জানুয়ারির ২৭ তারিখে শেষ হওয়া সপ্তাহে তাদের রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ শতাংশ কমে ৩০৯ কোটি ডলারে নেমে গেছে।
স্থানীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আরিফ হাবিব লিমিটেডের (এএইচএল) তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের রিজার্ভ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর এখনই সবচেয়ে কম; এই অর্থ দিয়ে ১৮ দিনের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে, এত কম দিনের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ১৯৯৮ সালের পর আর কখনোই দেখা যায়নি।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা রিজার্ভের পরিমাণ ৫৬৫ কোটি ডলার, যার অর্থ দেশটির মোট ডলার মজুদের পরিমাণ এখন মাত্র ৮৭৪ কোটি ডলার, বলছে এসবিপি।
“সংকট এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব ডলারের নতুন প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচি পুনরায় চালু জরুরি হয়ে পড়েছে,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন এএইচএলের গবেষণা প্রধান তাহির আব্বাস।
এদিকে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে (বেলআউট) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব শর্ত দিয়েছে, তা ধারণাতীত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান সরকারকে তা মেনে নিতে হবে।’ আজ শুক্রবার এসব কথা বলেন তিনি।
পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ। এসবের মধ্যে আছে কর বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানো। তবে দেশটি শর্তগুলো মানতে রাজি হচ্ছে না। সরকারের আশঙ্কা, আগামী অক্টোবরের নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
আজ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমি বিস্তারিত প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। শুধু বলব, আমরা অকল্পনীয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। আইএমএফের যে শর্তগুলো আমাদের মানতে হবে তা ধারণাতীত। তবে আমাদের শর্তগুলো মেনে নিতে হবে।’
২০১৯ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আইএমএফের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। তবে তিনি ভর্তুকি কমানোর মতো প্রতিশ্রুতিগুলো ফিরিয়ে নেন। এতে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। পরে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
পাকিস্তানে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি হওয়া ও তা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরে সংস্থাটির সঙ্গে পাকিস্তানের ২৪টির বেশি চুক্তি ভেস্তে গেছে।
শেয়ার করুন