তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতি দেশজুড়ে অপরিবর্তিত রয়েছে। জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আবহাওয়ার এই রূপ পরিবর্তনে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন, তাপপ্রবাহ কাটবে কবে? বর্ষা আসতে আর কত দিন? কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই স্বস্তির খবর আপাতত নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে। চলমান তাপপ্রবাহ এখনই কাটছে না বলে আভাস মিলেছে। আর বর্ষা আসতেও হচ্ছে দেরি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম এ বছর মাত্রা ছাড়াচ্ছে। এতে বাইরে দীর্ঘ সময় কাজ করেন এমন ব্যক্তি, মানসিক রোগী, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষ বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাপমাত্রা বেশি বাড়লে শরীরে পানিশূন্যতা, হিট ক্রাম্প, অবসাদ, হিটস্ট্রোক ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। গতকাল মৌলভীবাজারে ২ চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে হিটস্ট্রোকে। এর আগের দিন সিলেট নগরীর লালবাজারে ‘হিট স্ট্রোক’ করে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
তীব্র দাবদাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এই পূর্বাভাসে দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। দেখা গেছে, এসব স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতেই মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, নওগাঁ, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আরও চলতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন এমন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকার জন্য গরমের অনুভূতিও বেশি হতে পারে।
এই তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এখন মৌসুমি বায়ু আসার সময়। সাধারণত ৩১ মের মধ্যে এটি উপকূলের টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর তা বিস্তার লাভ করে। কিন্তু এবার আসতে দেরি হচ্ছে। তবে এবারই যে এমন হচ্ছে, তা নয়।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ২৩ জুন থেকে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করে। এর আগের বছর ছিল ১৪ জুন। ২০১৫ সালের পর থেকে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করছে।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে বিশেষ করে টানারোদে মাঠে কাজ করা কৃষক ও দিনমজুর রিকশা চালকসহ কর্মজীবী মানুষের অবস্থা সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।
গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন জানিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, তীব্র গরমে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর লবণ ও পানি হারায় আমাদের ত্বক। এই পানির ঘাটতি পূরণ না করলে পানিশূন্যতা হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে বারবার পানি পান করতে হবে। এ সময় শসা, লেবু-পানি, ডাব ইত্যাদি ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের দিকে এ সময় বিশেষ নজর রাখতে হবে।
শেয়ার করুন