স্টাফ রিপোর্টার : কয়েকদিন ধরেই ভ্যাপসা গরম সিলেটে। দিন দিন তা আরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। দিনের অর্ধেক সময় মিলছেনা বিদ্যুৎ। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও নগরজুড়ে ছিল ঘণ্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং। এই ভ্যাপসা গরমে দিন-রাতে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এতে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সিলেটে অর্ধেক সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে সিলেটে সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে বাড়ছে লোডশেডিং।
সিলেটের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং রোববার গরম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার দিবাগত রাতে সিলেটসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বৃষ্টির আভাস থাকলেও হয়নি বৃষ্টি। শনিবারও রাতে বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো। তবে সোমবার থেকে সিলেটসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন দৈনিক জালালাবাদকে জানান, শনিবার সিলেটে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা শুক্রবার ছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি। রোববার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, নগর এলাকায় গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামাঞ্চলে দিনে রাতে গড়ে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা মিলছেনা বিদ্যুৎ। এতে বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে ঘুমাতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। গভীর রাতেও লোডশেডিংয়ের কবল থেকে মুক্তি মিলছেনা। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, শনিবার দিনে সিলেট বিভাগে পিডিবির চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ মিলেছে। ফলে দিনের বেলায় লোডশেডিং একটু বেশী হয়েছে।
গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়লেও সহসা এ থেকে মুক্তি মিলবেনা বলে জানিয়েছেন তিনি। গরমের কারণে প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। সেই হারে উৎপাদন না বাড়ায় লোডশেডিং আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তবে বৃষ্টিপাত বেড়ে গরম কমলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমতে পারে বলেও জানান তিনি।
নগরীর পাঠাটুলার বাসিন্দা নাজমুল আহমদ জানান, গরম একটু বাড়তে না বাড়তেই লোডশেডিং বেড়েছে কয়েকগুণ। এই গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া ঘরে থাকা যায় না। বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হলো। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর থেকে এমনিতেই বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। এরমধ্যে অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বহুকষ্টে আছি।
মিরাবাজারের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, আগে শুনতাম গ্রামে বিদ্যুৎ যায়না মাঝে মাঝে আসে। এখন শহরেও সেই অবস্থা দেখছি। ঘন্টা যেতে না যেতেই লোডশেডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নগর এলাকায় এমন অবস্থা হলে গ্রামে কি হতে পারে তা কিছুটা হলেও অনুমান করা যাচ্ছে।
নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, দফায় দফায় বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে। ব্যবসায়ীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেনা। কারফিউ যখন ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে সেই মুহুর্তে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায় ঠিকে থাকা কঠিন হচ্ছে।
আম্বরখানার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, সিলেটের ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ যেন পিছু চাড়ছেনা। এমনিতেই বন্যায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। তারপর দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। আগামীতে কি হবে সেই শঙ্কা ত রয়েছেই। এরই মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গরমে নিজেই দোকানে বাস দায়। ক্রেতা আসবে কিভাবে? আর লোডশেডিং যেন আমাদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।
শেয়ার করুন