ইসরায়েলের নৌ-বিমান ও স্থল হামলায় প্রথম সাত দিনেই গাজা উপত্যকার ১০ লাখের বেশি মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। দিশাহারা এসব ফিলিস্তিনির ওপরও পড়ছে বোমা। হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল জাতিসংঘ এসব তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির (ইউএনআরডব্লিউএ) তথ্যমতে, গাজায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৮০০ শিশু নিহত হয়েছে। মুহুর্মুহু বোমার আঘাতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনি শিশুরা।
ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক জুলিয়েট টোমা বলেছেন, সাত দিনেই ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। এখনও সেখানে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। ফলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
দ্য মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে একসঙ্গে এত ফিলিস্তিনির উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার ঘটনা আর ঘটেনি। এসব মানুষের কাছে খাবার নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তৃষ্ণা মেটানোর পানি না পেয়ে ছটফট করছে তারা। তাদের মাথার ওপরে বোমা, মাটিতে গর্জে উঠছে ট্যাংক; গুলি আর গোলা।
ইসরায়েলের গাজা অবরোধের কারণে উপত্যকাটিতে সুপেয় পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে কুয়ার নোংরা পানি খেতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। নতুন করে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা তা-ও পাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি নজিরবিহীন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
গত শনিবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজায় সুপেয় পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে কুয়ার নোংরা পানি খেতে হচ্ছে। এতে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় সুপেয় পানির জন্য গাজায় জ্বালানি সরবরাহ জরুরি।
তিনি আরও বলেন, এটা জীবনমৃত্যুর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
লাজারিনি বলেন, ‘আমাদের এখন গাজায় জ্বালানি সরবরাহ করা জরুরি। কারণ সুপেয় পানির একমাত্র উপায় হলো জ্বালানি। যদি তা না হয়, মানুষ মারাত্মক পানিশূন্যতায় মারা যেতে শুরু করবে। শিশু, বয়স্ক ও নারীরা বেশি বিপদে পড়বে। তাই আমি মানবিক সহায়তার জন্য এখনই অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।’
শেয়ার করুন