গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

জাতীয়

গাজায় আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা, ঢাকার সময় বেলা ১১টায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে আজ বিকাল ৪টায় প্রথম দফায় ইসরায়েলের ১৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এভাবে দৈনিক ১২-১৩ জন করে চার দিনে ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে একই সময়ে ধাপে ধাপে প্রায় ১৫০ ফিলিস্তিনিকেও কারামুক্তি দেবে ইসরায়েল।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আলি-আনসারি বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শেষ মুহূর্তে নিবিড় আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। বিকাল ৪টায় ১৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতি আলোচনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত বৈঠকে মিসর, ইসরায়েল ও হামাসের কর্তকর্তারা অংশ নেন।

আগের দিন বুধবার ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন করে। যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের কর্মকর্তারাও যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেন। তখন ধারণা করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তা কার্যকর হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ মুহূর্তে আরও কিছু বিষয়ে ইসরায়েল অনুরোধ করে। হামাসের কাছ থেকে মুক্তি দিতে যাওয়া জিম্মিদের নাম-পরিচয় চায় ইসরায়েল। এ কারণে চুক্তি কার্যকর হতে বিলম্ব হয়।

পরে চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাল হিরশ মুক্ত হতে যাওয়া জিম্মিদের নামের তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে হামাসও কারামুক্ত হতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের তালিকা পেয়েছে বলে জানা গেছে।

চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ গাজায় চার দিন সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। তবে উত্তর গাজায় ইসরায়েল চাইলে দৈনিক ছয় ঘণ্টা বিমান হামলা বা ড্রোন কার্যক্রম চালাতে পারবে। তবে যুদ্ধবিরতি চলাকালে গাজায় সমরযানসহ ইসরায়েলি কোনো গাড়ি ঢুকতে পারবে না। গাজা থেকে কাউকে আটক করা যাবে না।

৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ২৮ অক্টোবর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তর গাজা অবরুদ্ধ উপত্যকাটির দক্ষিণাংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল। মূলত সেখানেই ইসরায়েলের স্থল অভিযান এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে। সেখানে হামাসের বেশকিছু শীর্ষনেতা আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চুক্তির দর কষাকষিতে হামাসের জোর দাবি ছিল, বিরতিতে ইসরায়েলকে গাজায় ড্রোন নজরদারি বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এটা জিম্মি বা নিজেদের নেতা ও যোদ্ধাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আসা-যাওয়া করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

চুক্তিমতে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের রাফাহ ক্রসিং হয়ে মিসরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলে পাঠানো হবে।

আর ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তারা সবাই অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে। সেখান থেকেই তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েল ও হামাস প্রাথমিকভাবে নারী ও শিশুদেরই মুক্তি দেবে। আপাতত কোনো সেনাকে ছাড়া হবে না।

চার দিনের যুদ্ধবিরতি সফল হলে দৈনিক ১০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে এক দিন করে বিরতি বাড়তে পারে। এভাবে ১০ দিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য কাতারে একটি দপ্তর খোলা হয়েছে। সেখানে সব পক্ষের কর্তকর্তা রয়েছেন।

চুক্তির মূল মধ্যস্থতাকারী কাতারের আশা, এ বিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে।

কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পরপর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফের শুরু হবে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও একই ধরনের কথা বলেছেন। কিন্তু জিম্মিদের মুক্ত করতে নেতানিয়াহু সরকার চাপে আছে। তাই যুদ্ধবিরতি বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু মাঠের বা রণক্ষেত্রের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

ইসরায়েল সমর্থক ও যুদ্ধবিরতির সমর্থকদের মুখোমুখি বিক্ষোভ। ১৫ নভেম্বর হোয়াইট হাউসের সামনে। ছবি : সংগৃহীত

এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার সর্বত্র ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় এদিন অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে।

একই দিন উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালটি ইসরায়েলি সেনারা কয়েক দিন ধরে ঘিরে রেখেছে।

এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৮ দিনে ১৪ হাজার ৮৫৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৬ হাজার ১৫০। নারী ৪ হাজারের বেশি। একই সময়ে আহতে হয়েছে ৩৬ হাজার।

হামলার পর থেকে গাজায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৪ হাজার ৭০০।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় ৪ হাজার। হামাস জিম্মি করে নিয়ে আসে ২৪০ জনকে। চারজন জিম্মিকে ইতোমধ্যে ছাড়া হয়েছে। সবাই নারী। দুজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

এদিকে আজ শুক্রবার হামাস যে ১৩ জনকে মুক্তি দিচ্ছে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তিনজন বলে জানা গিয়েছিল। হামাসের হাতে সাকল্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন নাগরিক জিম্মি রয়েছে। এসব ব্যক্তি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *