গুম-খুনের ‘আয়নাঘর’ চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার: জাফরুল্লাহ

জাতীয়

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, দেশে একের পর এক গুমের কাহিনি, এটা শেষ হওয়ার নয়। এর পরিবর্তন দরকার। সে জন্য বর্তমান সরকারের পরিবর্তন ও গুম-খুনের নির্যাতনী সেল ‘আয়নাঘর’ চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত ‘গুম ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের সস্মৃতিচারণ’ শীর্ষক এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে শুম খুনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এর আয়োজন করে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকাকে গুয়ান্তামো বে জেলের কারণে সারা পৃথিবী ধিক্কার দেয়। কিন্তু আমেরিকার সরকার যাদেরকে গুয়ান্তামো বে-তে নিয়ে যায়, প্রত্যেকের তথ্য প্রকাশ করে। আমাদের এখানে আয়নাঘর আছে, আমরা কেউ জানি না। এর পরিবর্তন দরকার।’

দেশের সব বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার। আমাদের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একবারও বলছে না- তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে সব আয়নঘর ভেঙে চুরমার করে দেবে। সব বিরোধী দলকে ঘোষণা দিতে হবে, গুম-আটক করার বিষয়টি বন্ধ না করেন, তবে প্রত্যেক পুলিশদের বিচার হবে এবং যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে হবে। দুর্ভাগ্য যে, বিএনপি তার নেতা চেনে না। তাদের নেতা হবে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া নয়। খালেদা জিয়া জামিন নিলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে জোয়ার বইবে। ওনাকে দিয়েই আমরা বলাব, প্রত্যেকটা গুমের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এয়ারকন্ডিশনার না চালাতে বলেছেন, কিন্তু ওনার বাড়িতে কয়টা এয়ারকন্ডিশনার, এই তথ্য তো দেননি। আমার বাড়িতে একটা এয়ারকন্ডিশনারও নেই। আপনি প্রতিহিংসা বাদ দেন। সষ্ঠু নির্বাচন দরকার, নির্বাচনের আগে একটা নিরপেক্ষ সরকার বা জাতীয় সরকার যাই বলেন না কেন, একটা কিছু করতে হবে। ২০১৪ সালের খেলা চলবে না। ২০১৮ সালের ইভিএমের চালাকি চালাকিও চলবে না।’

সমাবেশে বিভিন্ন সময়ে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের তুলে নেওয়ার সময়কার নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিলুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাস থেকে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে গুমের শিকার হই। প্রথমে আমাকে গামছা দিয়ে চোখ, মুখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। রাতভর নির্যাতন করা হয় আমার ওপর। এরপর তিনদিন পরে আমাকে আদালতে তোলা হয়। সেই তিনদিন আমি কোথায় ছিলাম সেটা জানতাম না। সেটা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো লাগে।’

এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আখতার হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- গুমের শিকার সব নাগরিককে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, সব রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়া এবং জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *