গোয়াইনঘাটে ইউপি চেয়ারম্যান হেলালের বিরুদ্ধে দেওয়া বানোয়াট স্মারকলিপি অকার্যকর করার দাবি ইউনিয়নবাসীর

সিলেট

তানজিল হোসেন, গোয়াইনঘাট (সিলেট):

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১০ নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলালের বিরুদ্ধে কতিপয় দুষ্কৃতকারী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের ইন্দনে মানববন্ধনসহ মিথ্যা ও বানোয়াট স্মারকলিপির প্রতিবাদ করে পাল্টা স্মারকলিপি দিয়েছেন ইউনিয়নবাসী।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. তৌহিদুল ইসলামের বরাবর চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলালের পক্ষে পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নবাসী পাল্টা স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম।
এতে দুষ্কৃতকারীদের ইন্দনে করা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি অকার্যকরের দাবি জানিয়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। স্মারকলিপিতে পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নবাসীর পক্ষে বিভিন্ন এলাকার ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বাক্ষর করেন।
তারা জানান, ১০নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়নবাসীর মতামতের ভিত্তিতে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলালের নিজ বাড়িতে তার নব নির্মিত ভবনে পরিষদের কার্যক্রম চলছে। তিনি চিকিৎসার জন্য গত ১৫ মে বিধি মোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ১৬ মে তারিখে বহিঃ বাংলাদেশ (মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে) চলে যান। বর্তমানেও তিনি সেখানে অবস্থান করছেন।
স্মারকলিপিতে ইউনিয়নবাসী জানান, বৃহত্তর আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীতা করে বিপুল ভোটে মোঃ গোলাম কিবরিয়া হেলাল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং পরপর তিন (৩) বার বৃহত্তর আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে নবগঠিত ১০নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে ছিল অশান্ত জনপদ, যেখানে নিত্য সঙ্গী ছিলো ঘুষ, দুর্নীতি, বিচারের নামে অবিচার, আমানতের টাকা আত্মসাৎ, চুরি, ডাকাতি। চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে একটি শান্তির জনপদ গড়ে তোলেন।
তারা জানান, গোলাম কিবরিয়া হেলাল একজন ন্যায় বিচারক ও শালিস ব্যক্তিত্ব। তিনি গোয়াইনঘাট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য ছাড়াও দীর্ঘ অনেক বছর এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন ও সরকারি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ, আলীরগাঁও কলেজ ও রুস্তমপুর কলেজের আজীবন দাতা সদস্য। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিলেট ডায়বেটিক সমিতি, মুসলিম সাহিত্য সংসদ, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব ও খুলনা পাইকগাছায় সুপ্রতিষ্ঠিত একটি লাইব্রেরীর আজীবন সদস্য। এর বাইরেও তিনি বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং অত্যন্ত সুনাম ও সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়া সংগঠক। গোয়াইনঘাট ক্রীড়া সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বেশ কয়েক মেয়াদে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সিলেট মহকুমার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। নিজ গ্রামে চেয়ারম্যান হেলাল গ্রামবাসীর সহযোগীতায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেন এবং এই মসজিদের মতোয়াল্লী তিনি।
ইউনিয়নবাসী জানান, গোলাম কিবরিয়া হেলাল আমাদের মিফতাহল কোরআন আব্দুল মহল মাদরাসার সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দায়িত্বকালীন সময়ে মাদরাসার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে।
গোলাম কিবরিয়া হেলালের বাবা মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আজির উদ্দিন সাবেক বৃহত্তর জাফলং (পূর্ব জাফলং, মধ্য জাফলং, পশ্চিম জাফলং ও গোয়াইনঘাট সদর) ইউনিয়ন পরিষদের সনামধন্য চেয়ারম্যান ছিলেন। তার চাচা মরহুম আলহাজ্ব ছয়ফুল আলম সাহেব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এমপি ছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে গোলাম কিবরিয়া হেলাল সিলেট জেলার বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের সভাপতি ও সিলেট জেলার ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ছিলেন এবং ২০০৫ সালে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পারিবারিক দিক দিয়েও তিনি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। তিনি একজন সৎ, ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক। শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘পুকাশ স্কুল এন্ড কলেজ’। এছাড়া এলাকার সকল দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন, যা বর্তমানেও চলমান। তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। স্থানীয় বৃহত্তর জৈন্তীয়া ১৭-পরগণার (জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ) সালিশ সমন্বয়ক কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট তার অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি দেয় পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের সাধারণ ছাত্র-জনতা।
এ ব্যাপারে স্মারকলিপির সত্যতা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *