
সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পুরান টেকনাগুল গ্রামের মাঝের রাস্তা ও পুরাতন রাস্তার প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ। যুগ যুগ ধরে সহস্রাধিক মানুষ এই গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ভোগান্তি নিয়েই যাতায়াত করছেন। গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না জরুরি সেবার কোনো গাড়ি। এমনকি গোরস্থান বা শ্মশানে যেতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে। রাস্তার কাদা মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি মাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গ্রামবাসী মিলে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো কাজ করেননি। তাই ভোগান্তি নিয়েই কয়েকযুগ ধরে এই বেহাল রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ গ্রামের মানুষকে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের হওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় রাস্তার মাটি সরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত ও ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে করে রাস্তাটি যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার কিছু কিছু জায়গায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। এ ছাড়া পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়ে বাড়িতে নিতে হয়। এই রাস্তা দিয়েই কৃষিপণ্য বাজারজাত করা হয়। পাশাপাশি টেকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট করে কাদা মাড়িয়ে যেতে হয় স্কুলে।
গ্রামের সচেতন সমাজ ও স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। জরুরি সেবার কোনো গাড়ি বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রæত হাসপাতানে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাস্তাটি সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
টেকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, একটি অনুন্নত এলাকায় টেকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান হওয়ায় আমরা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট করে স্কুলে আসা-যাওয়া করি। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে কাদা জমে যায় এবং এর ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না। ফলে তাদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে। এমনকি কোনো শিক্ষকও এই স্কুলে পাঠদান করাতে আসতে চান না।
গোয়াইনঘাট উপজেলা জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন বলেন, দীর্ঘ ৫-৬ বছর আগে গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে ও চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন শিহাব সহযোগিতায় টেকনাগুল পুরাতন রাস্তা ও মাঝের রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ করানো হয়। এরপর থেকে আর রাস্তার সংস্কারকাজ হয়নি। ফলে কোনোরকমে কাদা মাড়িয়ে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় খুব কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
তিনি প্রশাসনসহ রুস্তমপুর ইউনিয়নের সচেতন মহল ও চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন সিহাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাগবে অতি দ্রæত এই টেকনাগুল পুরাতন রাস্তা ও মাঝের রাস্তার সংস্কারের যেন ব্যবস্থা করা হয়।
রুস্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক ও ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন (ফরিজুল) বলেন, গ্রামবাসীর পাশাপাশি রুস্তমপুর ইউনিয়নের মাটিকাপা ও জামকান্দি গ্রামসহ বেশক’টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
রুস্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন শিহাব বলেন, যেহেতু এই রাস্তা টেকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের চলাচল ও গ্রামবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা, তাই আমরা গত কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ১৩-১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে দুটি রাস্তায় জনচলাচলের ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা হয়ে যায়। তাই আগামীতে রাস্তাটি সংস্কার করে দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে। যেহেতু এখন কোনো বাজেট নেই, তাই বাজেট যখন আসবে আমরা রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
শেয়ার করুন