সিলেটের গোয়াইনঘাটের আলীরগাঁও ইউনিয়নের লামাকুটাপাড়া গ্রামে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের নিয়ে তোলপাড় চলছে।দায়েরকৃত মামলার সাথে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক থাকা। মামলায় যাদের স্বাক্ষী রাখা হয়েছে তারা বেশিরভাগই আত্মীয় নিকটাত্মীয় স্বজন এবং বহিরাগত লোকজন।এমন ঘটনায় গ্রামবাসী হতবম্ভ। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের তদন্ত সাপেক্ষ প্রকৃত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে আদালতে প্রেরণে থানা পুলিশ বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাটে আলীরগাঁও ইউনিয়নের অজোপাড়াগা লামাকুটাপাড়া। এই গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম পরস্পর আপন ভাই। দীর্ঘদিন থেকে তারা প্রবাসে থাকেন এবং পালা করে ছুটি নিয়ে দেশে আসা যাওয়া করেন।গ্রামের বাড়ী কুটাপাড়ায়ও তাদের বেশ কিছু জমি-জমা সম্পত্তি রয়েছে।বেশ কবছর ধরে সিরাজুল ইসলাম প্রবাসে থাকলেও বাড়ীতে থাকেন নজরুল।
সম্প্রতি প্রবাসে থাকা সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রী রাহেলা আক্তার লাবনী নামে ৫ শতাংশ জায়গা খরিদ করেন একই গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে আলা উদ্দিন মখাই মিয়ার কাছ থেকে। জমি বিক্রয়ের পর প্রবাসী সিরাজুলের কাছ থেকে অন্যত্র বাড়ী ঘর করা পর্যন্ত ৩ মাস সময় চেয়ে নেন আলা উদ্দিন মখাই। ৩মাস পর সেই জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আলা উদ্দিন মখাইকে তাগাদা দেন প্রবাসী সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ নিকটজনরা।এই তাগাদা দেওয়াই যেন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।নিজের বিক্রিত ৫শতক জমি জবরদখল করে রেখে সেখানে যাতে কখনো প্রবাসী সিরাজুল বা তার পরিবারের কেউ আসতে না পারেন সেজন্য ফন্দি আটেন আলা উদ্দিন মখাই।
এদিকে, নিজের ক্রয়কৃত ৫ শতক জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ করলে তাতে বাঁধা দেন আলা উদ্দিন মখাই ও তার স্ত্রী সন্তানরা।
স্থানীয় কিছু প্রতারক শ্রেণীর লোকজনের শেল্টারের পাশাপাশি তিনি প্রবাসী সিরাজুল তার স্ত্রীসহ তাদের পরিবারের লোকজনদের হয়রানির উদ্দেশ্যে তিনি নিজের স্ত্রী সাইমা বেগম (৩৫) কে বাদী করে গোয়াইনঘাট থানায় প্রবাসী সিরাজুলের পরিবারের ৩জনকে আসামী করে একটি গণধর্ষণ মামলা করেন।মামলা নং-৯, তারিখ-১০/০১/২০২৩ ইং।
বাদী সাইমা বেগমের এজাহারে ১নং আসামী ইমন (১৭), ইসলাম উদ্দিন (৫০) ও নজরুল ইসলাম (৫৫) তারা পরস্পর মামা ভাগ্নে। তাছাড়া দায়েরকৃত মামলায় যাদেরকে স্বাক্ষী দেওয়া হয়েছে বেশির ভাগই আত্মীয় বাদীর আত্মীয় স্বজনও বহিরাগত।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় লামাকুটাপাড়া গ্রামের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে।গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মুরব্বি মোহাম্মদ আলী (৬৯), মৃত ফয়জুল্লাহর ছেলে সাহাব উদ্দিন (৫০), মৃত মুছা মিয়ার ছেলে সামছু উদ্দিন, মৃত জাহের আলীর ছেলে সামসুল ইসলামসহ সমবেত অগণিত গ্রামবাসী জানান একটি গণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো অথচ আমরা আশপাশের লোকজন জানলামও না। আমরা মনে করি এই গণধর্ষণ মামলা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও রহস্যজনক। বিষয়টি পুলিশের গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে মূল ঘটনা উৎঘাটনের দাবী জানানা তারা।
মামলার স্বাক্ষীদের মধ্যে ছলিমা বেগম (মা), আলা উদ্দিন মখাই (স্বামী), কিবরিয়া (আপন ভাই), মুজম্মিল আলী (অপর আপন ভাই দুবাই প্রবাসী), আজির উদ্দিন দূরবর্তী লাফনাউট এলাকার বাসিন্দা।
আলা উদ্দিন মখাইর বোন ও মামলার বাদীনির ননদ তাহেরা বেগম জানান, এ বিষয়টি রহস্যজনক।সঠিক তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
বাদীনির বাশুরের স্ত্রী পাশের ঘরের বাসিন্দা মায়ারুন নেছা জানান,ঘটনার সময় কোন ধরনের চিৎকার, চেচামেচী বা মানুষজনের চিল্লা চিল্লি শুনি নাই বা পাশের ঘরের হলেও আমাদেরকে বাদী বা বাদীর স্বামী অবহিত করেনি।এত বড় একটি ঘটনা অথচ পাশের ঘরে থেকেও আমরা জানি না।এটা অত্যন্ত রহস্যজনক ব্যাপার।
৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক ওয়ার্ড সদস্যা সমসিদা বেগম জানান,আমার জানা মতে আলা উদ্দিন মখাই একজন বিতর্কিত মানুষ। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে তার পরিবারে একটি নেক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে, আশপাশের সচেতন সবাই অবহিত।
গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী রানী বলেন, আমার জানামতো প্রবাসী নজরুল, সিরাজুলরা অত্যান্ত ভালো মানুষ। গ্রামের সকলের সাথে তাদের চমৎকার সু-সম্পর্ক অব্যাহত আছে।বিপদে-আপদে গ্রামের মানুষজনের পাশে তাদের পাওয়া যায়। গণধর্ষণের মতো ঘটনায় তারা জড়িত থাকতে পারে তাও আবার আপন মামা ও কিশোর ভাগ্নেসহ।
গ্রামের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন জানান, এটা পরিকল্পিত সাজানো নাটক। ঘরের এত ছোট্ট কাঠা বেড়া দিয়ে একজন নারীকে ধরে বের করে নিয়ে আসা অসম্ভব।প্রবাসী পরিবারের নিছকই হয়রানি এবং মখাইর দখলে থাকা তাদের ক্রয়কৃত ৫ শতক জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এই রহস্যজনক মামলা দায়ের করা হয়েছে।বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে থানা পুলিশের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে এই ঘটনার আগে এই বিষয়ে বাদীনির স্বামী আলা উদ্দিন মখাই একাধিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার একজন গণমাধ্যমের কর্মীকেও অগ্রিম ফোন করে রেডি থাকতে বলেছেন।
সরেজমিন ঘটনাস্খলে গিয়ে বক্তব্যের জন্য মামলার বাদী সাইমা বেগমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার দায়েরকৃত মামলায় সংযুক্ত মোবাইলে ফোন দিলে তার স্বামী আলা উদ্দিন মখাই ফোন ধরেন এবং বাদীনিকে চাইলে বাদীনি সাইমা বেগম এখন ঘরে নেই বলে জানান।
প্রবাসী নজরুল, সিরাজুল পরিবারে কাছে বিক্রি করা ৫ শতক ভূমি আত্মসাতের জন্যই স্ত্রীকে দিয়ে গণধর্ষণ মামলা করেছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন আলা উদ্দিন মখাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়াইনঘাট থানার বিদায়ী ইন্সপ্রেক্টর তদন্ত ওমর ফারুক মোড়ল জানান,আলীরগাঁও ইউনিয়নের লামাকুটাপাড়া গ্রামে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্য ও রহস্যজনক মনে হচ্ছে। যেহেতু ধর্ষণের বিষয় তাই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। মূল ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন