আশা জাগাচ্ছে সিলেটের গ্যাস

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার: খনিজ সম্পদে ভরপুর সিলেট। এ বিভাগের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মুল্যবান খনিজ সম্পদ। এরমাঝে প্রধানতম হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্র, কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্র, সিলেট গ্যাস ক্ষেত্র, সেভরন গ্যাস ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অংশ সিলেটে মুজুদ আছে। এরমাঝে নতুন করে গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা পরিত্যক্ত কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। আর এতে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে সিলেটের গ্যাস।

বুধবার রাত থেকে উত্তোলিত এ গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এখান থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৬২ থেকে ৬৫ লাখ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হচ্ছে বলে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) সূত্রে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ বাড়বে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান।এসজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান শুক্রবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে জানান, কৈলাশটিলা থেকে বর্তমানে ৬৫ লাখ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালাইন লাইনে সরবরাহ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরিমান আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, কৈলাশটিলা-২নং কূপের ৩১২৬ থেকে ৩১৩০ মিটার গভীরতায় গত ৯ ও ১০ নভেম্বর পরীক্ষা করে প্রায় ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তারপর কূপের কম্প্রেশন কাজ শুরু হয়। বুধবার কম্প্রেশন কাজ সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, এই কূপে ওয়ার্কওভার করে যে গ্যাস আমরা পাচ্ছি সেটা থেকে বলা যায়, প্রায় ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ এখানে আছে। এই গ্যাস উত্তোলন করলে আশা করা যায়, ১৫ থেকে ২০ বছর চলবে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড বর্তমানে ৯৩ মিলিয়ন গ্যাস প্রতিদিন উৎপাদনে সক্ষম আছে।
এসজিএফএল সূত্র জানায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের কাজ শুরু হয়। সিলেটের এই ১৪টি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে গত বছর থেকে উৎপাদন শুরু হয়। বুধবার থেকে কৈলাশটিলার কূপে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিডেটের আওতাধীন গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা-২নং কূপ থেকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। গত ২৭ জুলাই এই কূপ পুনঃখনন শুরু হয়। খননের পর গেল সপ্তাহে এই কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই কূপের একটি লেয়ার থেকে আগে গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছিল। গ্যাস উৎপাদনের কিছুদিন পর এই লেয়ারে পানি এসে যাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা এই কূপ পুনঃখনন কাজে আরও একাধিক লেয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে গত ৯ ও ১০ নভেম্বর পরীক্ষা করে গ্যাস পাওয়া যায়।

এসজিএফএল সূত্রে আরও জানা যায়, ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর একের পর এক গ্যাসক্ষেত্রের খোঁজ মিলে। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। সেগুলো হলো- হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৩টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। গত বছর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের আওতাধীন সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করা হয়। বর্তমানে এসব কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ নভেম্বর এই কৈলাশটিলার ২ কূপের ওয়ার্কওভার উদ্বোধন করেন। বাপেক্সের মাধ্যমে আমরা ওয়ার্কওভারের কাজ শুরু করি। এই কর্মকা-ে বাপেক্স এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড সম্মিলিতভাবে কারিগরি সহযোগিতা করেছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা সার্বিক সহযোগিতা করেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *