ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ট জনজীবন

সিলেট

ডেস্ক রিপোর্ট : শহর-নগর, মফস্বলসহ ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সিলেটের মানুষজন।বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজিতে দুর্ভোগ চরমে। যদিও বিদ্যুৎ বিভ্রাট সিলেটের দীর্ঘদিনের পরিচিত সমস্যা। তবে গত কয়েকদিন ধরে এ সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ যেন আসা-যাওয়ার খেলা।এরইমধ্যে সিলেটে টানা ৪ দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করছে, ফোন করছে, কিন্তু বিদ্যুৎ কর্মকর্তাগণ বেশিরভাগ সময়ই তাদের নাখোশ করছেন ফোন রিসিভ না করে। রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদাসীনতা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরকারি নাম্বার থেকে শুরু করে সাধারণ অভিযোগ কেন্দ্রের নাম্বারগুলোও প্রতিনিয়ত ব্যস্ত। নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা সুমন জানান, একদিকে দ্রব্যমুল্যের লাগাহীনতা অন্যদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট।

জানা গেছে- জরুরি মেরামত, সংরক্ষণ কাজ ও লাইনের উপর থাকা গাছের শাখা-প্রশাখা কাটার জন্য বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার (২০ থেকে ২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত টানা ৪ দিন সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় শিডিউল অনুযায়ী সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বুধবার (১৯ অক্টোবর) জানান, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) মহানগরীর সোনারপাড়া, পূর্বাশা ক্লিনিক, মজুমদারপাড়া, দর্জিপাড়া, পূর্ব মিরাবাজার ও খারপাড়ায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) মহানগরীর বন্দরবাজারস্থ হকার্স মার্কেট, কালীঘাট, মহাজনপট্টি, বটেরতল, মাছিমপুর ও ছড়ারপারে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। শনিবার (২২ অক্টোবর) মহানগরীর বালুচর, শান্তিবাগ আ/এ, আল-ইসলাহ আ/এ, সােনার বাংলা আ/এ, আলুরতল, গোপালটিলা, আরামবাগ, দলদলি চা বাগান এবং আশপাশ এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। রবিবার (২৩ অক্টোবর) মহানগরীল রায়নগর, ঝর্নারপাড়, দর্জিবন্দ, খরাদিপাড়া, দপ্তরিপাড়া, মনিরের দোকান, আগপাড়া, বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও আশপাশ এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

এর আগে ১৩ অক্টোবর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন এক বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। ১৫ অক্টোবর শনিবার সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা ১০ ঘণ্টা মহানগরীর বালুচর, শান্তিবাগ আ/এ, বালুচর প্রাইমারি স্কুল, সােনার বাংলা আ/এ, আলুরতল, গোপালটিলা, নতুন বাজার, উত্তর বালুচর, আল-ইসলাহ, আরামবাগ, বালুচর ছড়ারপাড়, দলদলি চা বাগান ও ফোকাস আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

সপ্তাহে দুই থেকে ৩দিন পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সিলেটের মানুষজন। এভাবে গত দুই মাস থেকে সিলেটে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। গ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে বলেন লোডশেডিং কিছুক্ষণ মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভগের ভেলকিবাজি মেনে নেওয়া যায় না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, চাহিদার সাথে সরবরাহের ঘাটতি থাকায় শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। অথচ, আগে লোডশেডিং হতো মাত্র ২০ ভাগ। সিলেট জোনের ৮টি গ্রিডে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫৯৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩৯৮ মেগাওয়াট।

তিনি জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। আগামী মাসে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তার আশা।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর জেনারেল ম্যানেজার দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী জানান, ৮টি উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৮০ মেগাওয়াট। সময়ে সময়ে চাহিদা ও সরবরাহের তারতম্য ঘটায় গ্রাহকরা দুর্ভোগের শিকার হন।

এদিকে, জাতীয় গ্রিডে আকস্মিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর টানা লোডশেডিং এর মধ্যেই মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য টানা ৯-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধের ঘোষণায় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে গত জুলাই মাস থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন সিলেট অঞ্চলেও দিনে দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে আকস্মিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সিলেটে প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট অঞ্চলের কয়েক লাখ গ্রাহক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *