ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১০

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে পটুয়াখালীতে তিনজন, ভোলা ও বরিশালে দুইজন করে এবং সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে রয়েছে।

এরমধ্যে সোমবার (২৭ মে) আটজন এবং রোববার দুইজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, পটুয়াখালীতে গাছচাপায় একজন, জলোচ্ছ্বাসে একজন ও মাথায় ছাদ পড়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, বরিশালে ভবনের দেয়াল ধসে দুইজন, চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক পথচারী ও ভোলায় ঝড়ে ঘর ও গাছচাপা পড়ে প্রাণ গেছে দুইজনের। সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়।

পটুয়াখালী

ঝড় শুরুর আগে রোববার দুপুরে জলোচ্ছ্বাসের সময় পটুয়াখালীতে বোন ও ফুফুকে উদ্ধার করতে গিয়ে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। মো. শরীফ হাওলাদার নামের ২৮ বছর বয়সী ওই যুবক কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিম হাওলাদারের ছেলে।

এছাড়া আজ সোমবার দুমকী উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে (৭০) এক বৃদ্ধের প্রাণহানি ঘটে। তিনি উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে বাউফলে ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যু হয়েছে মো. আব্দুল করিম (৬০) নামের এক পথচারীর। ঝড় শুরু হলে সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে এক পুরানো (পরিত্যক্ত) অফিসের নিচে আশ্রয় নেন আব্দুল করিম। ঝড়ের তাণ্ডবে অফিসটি ভেঙে পড়লে তিনি চাপা পড়ে প্রাণ হারান। তিনি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এদিন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।

ভোলা

ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর প্রাণ গেছে। সোমবার ভোরে উপজেলার চর উমেদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
৫৫ বছর বয়সী মনেজা খাতুন চর উমেদ এলাকার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

জানা যায়, মনেজা খাতুন নামের নিহত ওই নারী রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তার স্বামী ও নাতনিও একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর ৪টার দিকে তীব্র ঝড়ের মধ্যে তাদের বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার স্বামী ও নাতনি বের হতে পারলেও মনেজা ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করেন।

এছাড়া দৌলতখান উপজেলায় ঝড়ে মাইসা নামের একজন ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন। এদিকে বোরহান উদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে জাকির নামে একজনের মৃত্যু হয়।

বরিশাল

বরিশালে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভবনের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলে পড়ার পর ওই হোটেলের মালিক ও কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান এবং কর্মী মোকসেদুর রহমান। আহত আারেক কর্মী শাকিবকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, নিহত লোকমান, মোকসেদুর ও শাকিব টিনশেডের ওই হোটেলের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাইরে তখন ঝড়-বৃষ্টি চলছিল। সোমবার ভোর ৪টার দিকে একপর্যায়ে পাশের তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধসে হোটেলের টিনের চালে ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয়। নগরীর রুপাতলী এলাকায় লিলি পেট্রোল পাম্পের পাশে এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে পড়ে এক পথচারীর প্রাণ গেছে। সোমবার সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর চন্দ্রনগর তালতলার জেডএ আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত পথচারীর নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬); তিনি থাকতেন খুলশী থানার চৌধুরী নগর শতাব্দী হাউজিং এলাকায়, কাজ করতেন বায়েজিদ তারা গেইট এলাকার একটি কার্টন ফ্যাক্টরিতে। হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে।

জানা যায়, সকালে কাজে যাওয়ার সময় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে পড়ে ছেলেটি শরীরের ওপরে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল নামে এক বৃদ্ধ মারা যান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *