চলতি মাসেই আরও ২০ বার কাঁপবে বাংলাদেশ!

জাতীয়

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী ও একটি ঢাকায় ছিল। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে একটি এবং শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনের বিভিন্ন সময়ে তিনটি ভূমিকম্প হয়, যার ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। এদিনের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।

এদিকে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ভূ-চ্যুতি (ফল্ট) শনাক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রেক্ষিতে আগামী এক সপ্তাহে আরও ২০ বার ভূকম্পন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, দুই দিনে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ২০ বার এমনটি হতে পারে। যদি ৫.৭ মাত্রার চেয়েও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভয়াবহ দুর্যোগ হতে পারে। তিনি নরসিংদীকে এই ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা-মোট তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রুবাইয়াত কবির বলেন, প্লেটগুলো এখন আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ভারতীয় প্লেট যদি ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়, তাহলে বাংলাদেশ মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে পড়বে।

২০১৬ সালের গবেষণায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ‘মেগাথার্স্ট ফল্ট’ শনাক্ত করা হয়, যা পললস্তরের নিচে মাইলজুড়ে বিস্তৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে গত ৮০০ থেকে হাজার বছরের মধ্যে জমে থাকা শক্তি মুক্ত হয়নি। এ অঞ্চল ‘রিং অব ফায়ার’-এর মতোই বিপজ্জনক।

ঘোড়াশালের ফাটল থেকে সংগ্রহ করা মাটি পরীক্ষা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, নমুনা পরীক্ষা করে ভূমিকম্পের গভীরতা ও প্রকৃতি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উপরে উঠে আসে। সেখানে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। প্লেটের চলনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *