চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের আহবায়ক সবুজ তাঁতি
চা-শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রেখে বিজয় উদযাপন পরিপূর্ণ হয় না
চা-শ্রমিকদের ২০২১-২০২২ সালের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সিলেট সদর উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের আগস্ট মাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হলেও বকেয়া মজুরি এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয় নি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মজুরি নির্ধারণের নতুন চুক্তির সময় আসন্ন। কিন্তু বাগান মালিকরা চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করছেন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ও খাদিম চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সবুজ তাঁতির সভাপতিত্বে ও সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বুরজান চা-কারখানা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বিলাস ব্যানার্জির সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা খায়রুল হাছান, শ্রীবাস মাহালী, সমন্বয়ক এস এম শুভ, সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জিতেন সবর, সদস্য এবং লাক্কাতুরা চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল বিশ্বাস, চা-শ্রমিক কুমকুম নায়েক, দীপালি সিং, রহিমা খাতুন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সিলেট জেলা কমিটির সদস্য মাশরুখ জলিল প্রমুখ।
বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন বাগানের বিক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকদের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্ত¡রে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। সমাবেশ শেষে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত, শোষিত, নির্যাতিত শ্রমিক জনগোষ্ঠী চা জনগোষ্ঠী। বেশ কয়েক বছর যাবত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে চা-শ্রমিকদের জীবন দিশেহারা। ১২০ টাকা মজুরিতে চা-শ্রমিকদের পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি নির্ধারিত হওয়া দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। ২০২১ সাল থেকেই মজুরি বৃদ্ধির পাওয়ার কথা থাকলেও ১৯ মাসেও চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয় নি। বাধ্য হয়ে চা- শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ ১৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারিত হয়। বর্তমান বাজারমূল্যে ১৭০ টাকা মজুরিতে সংসার চালানো খুবই কঠিন। কিন্তু দুঃখের বিষয় চার মাস অতিবাহিত হলেও চা-শ্রমিকদের ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস হতে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ধিত ৫০ টাকা বকেয়া মজুরি এখনো পরিশোধ করেন নি বাগান মালিকরা।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহবায়ক সবুজ তাঁতি বলেন, বিজয়ের মাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রেখে বিজয় উদযাপন পরিপূর্ণ হবে না। তাই বিজয়ের এই মাসের মধ্যেই চা-শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশের চা-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।